গত জুনে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে নাসির উদ্দিন মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। পরীমণি ফেসবুক লাইভে এ অভিযোগ করেন। এরপর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কাকতালীয়ভাবে অভিযোগের আঙুল ওঠে পরীমণির বিরুদ্ধে। গত ৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে পরীমণিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, বাড়িতে নিষিদ্ধ মাদক রেখেছিলেন তিনি। এরপর অভিনেত্রীকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার দেখায় র্যাব অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এর মধ্যেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি হতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার একেবারে ট্রেন্ডিংয়ে উঠে আসেন পরীমণি। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও গণমাধ্যমের শীর্ষ খবরে উঠে আসে পরীমণির জেল হেফাজতের ঘটনা। অবশেষে গ্রেফতারের ২৬ দিনের মাথায় ৩১ আগস্ট জামিন পান এই অভিনেত্রী।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ফেসবুকে ভাইরাল হয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও নায়ক ইমনের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ। সেখানে মাহিকে অশ্লীল কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। এরই জেরে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়। মাহি তখন ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন। তবে অভিযোগের তীর অনেকটা বিঁধে নায়ক ইমনের গায়ে। সে সময় ইমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বলে জানান।
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল ইভ্যালিকাণ্ড। এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতার অভিযোগে জনপ্রিয় তারকা তাহসান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গত ৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। এ নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড়। তবে ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান মিথিলা ও ফারিয়া। তাহসান এ মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। মামলাটি এখনো চলমান।
এদিকে ১০০ সিনেমার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রযোজক সেলিম খানকে ইঙ্গিত করে স্টুপিড বলেন শাকিব খান। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন পাশের দেশের মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির কথা। সেখানে ৩০০ কোটি রুপি দিয়ে সিনেমা বানানো হয়। আর ঢাকাই সিনেমা নির্মাণ করা হয় মাত্র ১০-২০ লাখ টাকায়।
পাল্টা বিভিন্ন মাধ্যমে সেলিম খান বলেন, শাকিব খান সুপারস্টার আমি মানি না। তাদের কর্মকাণ্ডে মাঠ গরম। এদিকে বছর শেষে খবর রটে শাকিব খান আমেরিকায় স্থায়ী হচ্ছেন। এই খবরে সিনেপাড়ায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রে কিছুদিন থাকতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে, ঈদুল আজহায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারের পর ‘ঘটনা সত্য’ নাটকটি প্রচার হয় সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে। এরপরই নাটকের শেষ সংলাপ (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মা-বাবার পাপের ফসল) নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সর্বমহলে। দর্শক-সমালোচকদের তুমুল আপত্তি ও প্রতিবাদের মুখে নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেয় সংশ্লিষ্টরা। মঈনুল সানুর চিত্রনাট্য এবং রুবেল হাসানের পরিচালনায় ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন আফরান নিশো ও মেহ্জাবিন চৌধুরী। বিষয়টি ‘একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল’ বলে দুঃখ প্রকাশ করে নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী এবং কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়।
এছাড়া ঈদুল আজহায় এনটিভিতে প্রচারিত নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহর ‘দ্য টিচার’ নাটকের একটি সংলাপ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একটি দৃশ্যে অভিনয় শিল্পী ইফতেখার রায়হান (ইউটিউবার রাফসান দ্য ছোট ভাই) তার সংলাপে ‘এগ্রিকালচার’ শব্দটি ব্যবহার করেন। কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের দাবি, ‘সংলাপটি গালি বা ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছে। যা কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।’
এ ঘটনায় নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন বান্নাহ। তিনি বলেন, ‘শব্দ প্রয়োগজনিত এই বিষয়টি খুবই ভুল হয়েছে। যেটি আমি স্বীকার করি। আমি সত্যিই মন থেকে অত্যন্ত দুঃখিত, ব্যথিত ও লজ্জিত এই অসচেতন ভুলের জন্য।’
আর বছরজুড়ে সিনেমা নয়, শিল্পীদের নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে আলোচনায় ছিলেন চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এ বছর মার্চের শুরুর দিকে ফারদিন প্রার্থনা দীঘির ‘তুমি আছো তুমি নেই’ সিনেমা মুক্তি পায়। সিনেমা নিয়ে একটি মন্তব্য করেন দীঘি। এরপরই দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এক সাক্ষাৎকারে দীঘিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে নায়িকা সিনেমা মুক্তির আগেই এর ট্রেলার তার ভালো লাগে নাই, ছবি মানহীন, কেউ দেখবে না এসব মন্তব্য করে তার দাম দুই পয়সাও নয়।’ এ নিয়ে অবশ্য দীঘি কোনো পাল্টা মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে নিয়েও মন্তব্য করেছেন নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তার ভাষ্য, ‘অল্প পানির মাছ বেশি পানিতে গেলে যা হয়। তারা নিজেকে অনেক বেশি কিছু মনে করেন। কত বড় সাহস, ডাবিং ছাড়া না বলে চলে যাওয়া। ও (শাকিব খান) কেন বেড়াতে যাবে কাজ ফেলে। থাপ্পড়ে ওর দাঁত ফেলে দেয়া উচিত!’
চলতি বছর চালু হয় বিদেশি চ্যানেলের ক্লিন ফিড সম্প্রচার। বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল চ্যানেলের দেশীয় পরিবেশকদের। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন দেশীয় টিভি চ্যানেল সংগঠনের নেতারা। কয়েকদিন জি বাংলা ও স্টার জলসার টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠান বন্ধ রাখায় দর্শকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড চালু করায়, বিজ্ঞাপন ছাড়াই অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন বাংলাদেশের দর্শকরা।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ