শিল্পীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নাটক, গান কিংবা সিনেমার প্রকৃত মালিকানাসংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বাড়তে থাকায় এ ধরনের জটিলতাও বাড়ছে। কারণ বর্তমান সময়ে যে কেউ ইচ্ছে করলেই তার সংগ্রহে থাকা মাস্টার প্রিন্ট বা পুরনো কপি অডিও বা ভিডিও ফরম্যাটে বাণিজ্যিক উদ্দেশে অনলাইনে আপলোড করে দিতে পারছেন, যা ‘পাইরেসি’ হিসেবে গণ্য। এর ফলে প্রাপ্ত রয়্যালিটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মূল শিল্পী বা স্বত্বাধিকারী। গান ও সিনেমার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। অনেক সময় মামলা-মোকদ্দমাও হচ্ছে এ সংক্রান্ত জটিলতায়। তবে মামলা-মোকদ্দমা যাই হোক না কেন, যদি সংগীতকর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা না থাকে তবে এ নিয়ে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
শিল্পীদের সচেতনতা
শিল্পীরা তাদের অধিকার আদায়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তবে শিল্পকর্মের পাইরেসি ঠেকাতে তাদের অবশ্যই কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী জানান, এত টাকা খরচ করে একটা গান, নাটক বা সিনেমা তৈরি করা হয়; কিন্তু সেটা যে পাইরেসি হয়ে যেতে পারে, আর তা ঠেকাতে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে— সেই বিষয়ে শিল্পীরা খুব বেশি সচেতন নয়।
তবে দিন দিন সচেতনতা বাড়ছে। জাফর রাজা চৌধুরীর মতে, অধিকার আদায়ে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকাররা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। যেমন ২০১৭ সাল পর্যন্ত বছরে গড় রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৫০। পরের বছর রেজিস্ট্রেশন বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৯৫টি, ২০১৯ সালে এটি দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০৫টিতে; আর গত বছর এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬২১টিতে। ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন পড়েছে ২ হাজার ৮৯৬টি।
যত অভিযোগ
কপিরাইট জটিলতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে সিনেমা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। জানা যায়, গত চার বছরে প্রায় ১০০০’র মতো সিনেমার কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এর পরই আছে সংগীতশিল্পীরা। টিভি নাটকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম। সম্প্রতি নাট্যনির্মাতা এফ জামান তাপস তার ‘পূর্ণতা’ নামে একটি নাটক নিয়ে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করেছিলেন, পরে বিষয়টি প্রযোজক ও পরিচালকের মধ্যে মিটমাট করে দেয়া হয়। গান নিয়ে এ পর্যন্ত ২৫টি অভিযোগ জমা পড়ে কপিরাইট অফিসে, তার মধ্যে ২০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।
গান-সিনেমার স্বত্বাধিকারী
একটা গানের ক্ষেত্রে কথার মালিক গীতিকার, সুরের মালিক সুরকার আর যিনি পরিবেশন করেন মানে কণ্ঠশিল্পী— তিনি পান রিলেটেড রাইট। অর্থাৎ একটা গানের মালিক হলেন গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। এছাড়া গান কপিরাইটে মেয়াদ হচ্ছে, ওই গানটি যেদিন প্রকাশ হয়েছে সেদিন থেকে ৬০ বছর। আর যারা রিলেটেড রাইটের অধিকারী, অর্থাৎ কণ্ঠশিল্পী তিনি এই গানটির মালিক থাকবেন প্রকাশকাল থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত।
কপিরাইট অফিসে গান কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়, এমন প্রশ্নে শতাব্দীর শোবিজকে জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘সিডি বা অ্যালবামের ক্ষেত্রে ১০টি বা ১২টি গানের কপিরাইট নেয়া যাবে একটা কর্ম হিসেবে। একটা গানের মালিক তিনজন, এই ক্ষেত্রে যদি গীতিকার একা আসেন কপিরাইট নিতে, তবে অবশ্যই তাকে আমাদের অফিসে সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীর নাম বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। একটা সার্টিফিকেট হবে, সেটার তিনটি অরিজিনাল কপি হবে। গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী— প্রত্যেকের কাছে একটা করে কপি থাকবে। তবে ধরুন শুধু গীতিকার কপিরাইট করে গেলেন, কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার এলেন না, সে ক্ষেত্রে গীতিকার শুধু তার অংশটুকুই পাবেন, আর বাকিরা যখন আবেদন করবেন তখন তারা তাদেরটাও পাবেন। কিন্তু প্রত্যেকেরই কপিরাইটের জন্য আলাদাভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আর ব্যান্ড সংগীতের ক্ষেত্রে গানের কপিরাইট নিতে হলে অবশ্যই লিখিতভাবে ওই ব্যান্ডের এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) কপি জমা দিতে হবে। যেহেতু এটা দলগত একটা কাজ।’
আর সিনেমার ক্ষেত্রে চারটি বিষয় জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে প্রেক্ষাগৃহে পরিবেশন রাইট, সিনেমার গানগুলোকে আলাদাভাবে পরিবেশন, টেলিভিশন চ্যানেলে পরিবেশন রাইট, এছাড়া রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিবেশন রাইট। তাই সিনেমা কপিরাইটের ক্ষেত্রে প্রযোজকের সঙ্গে এই চারটি বিষয়ে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
সরাসরি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে গিয়ে আবেদন করা যায়। এমনকি অনলাইনেও বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ওয়েবসাইটে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন ফি ১০০০ টাকা।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ