ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস

যে কারণে পিছিয়ে উপমহাদেশের সিনেমা

প্রকাশনার সময়: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:৪৮

২০০২ সালে প্রথমবারের মতো অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে (অস্কার) ছবি পাঠায় বাংলাদেশ। নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ তৈরি করে সেই ইতিহাস। এ সিনেমা দিয়েই প্রথমবার অস্কারে অংশ নেয় বাংলাদেশের ছবি। এরপর পাঠানো হয়েছে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নিরন্তর’, ‘স্বপ্নডানায়’, ‘আহা!’, ‘বৃত্তের বাইরে’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’, ‘টেলিভিশন’, ‘জোনাকির আলো’, ‘জালালের গল্প’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘খাঁচা’, ‘ডুব’, ‘আলফা’, ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ ছবিগুলো।

সর্বশেষ ৯৪তম অস্কারে জমা দেয়া হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো অফিসিয়াল মনোনয়ন পাওয়া নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। তবে এরই মধ্যে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ছবিটি। যদিও এ বছর ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে ভুটানের সিনেমা ‘লুনানা: এ ইয়াক ইন দ্য ক্লাসরুম’ সিনেমাটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। এটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা পয়ো চোয়িং দরজি।

এর আগে ‘লগান’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘সালাম বোম্বে’সহ ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কিছু সিনেমা অস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিলেও অস্কার জেতার রেকর্ড নেই। যদিও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে প্রথমবার ভারতীয় নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ রায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এরপর গুলজার, ভানু আথাইয়া, এআর রহমান ও রেসুল পুকুট্টি অস্কার জিতেছেন। কিন্তু সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেলেও কোনো ভারতীয় সিনেমার অস্কার জেতার রেকর্ড নেই।

কেন ভারতীয় চলচ্চিত্র অস্কার দৌড়ে পিছিয়ে এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো কারণ। অস্কারে শুধু ছবি পাঠিয়ে বসে থাকা নিরর্থক। যে কেউ তার ছবি অস্কারে জমা দিতে পারে। এর মানে এই নয় যে, চূড়ান্ত মনোনয়নে জায়গা মিলে যাবে। পুরস্কার তো দূরের কথা। জমাদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আরো মেলা পথ পাড়ি দিতে হয়।

অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের আট হাজার জুরি সদস্যের বেশিরভাগই গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ছবি দেখে থাকেন। যেমন কান, টরন্টো, ভেনিস, বার্লিন, ট্রাইবেকা, সানড্যান্স। এসব আয়োজনে কোনো ছবি প্রশংসা কুড়ালে অস্কার সম্ভাবনা জাগতে শুরু করে। তখন সনি পিকচার্স ক্ল্যাসিকস কিংবা ফক্স সার্চলাইট পিকচার্সের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উত্তর আমেরিকায় পরিবেশনার দায়িত্ব নেয়। এভাবে ধীরে ধীরে সুযোগ সৃষ্টি হতে থাকে।

এখন বলা অসম্ভব বাংলাদেশের কোন ছবি কবে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোতে হৈচৈ ফেলতে পারবে। তেমন হাইপ সৃষ্টি করতে দুই বছর কিংবা তিন বছর নয়তো পাঁচ বছর বা ১০ বছর লেগে যেতে পারে। এমনও হতে পারে কখনই আমাদের সেই ছবি পাওয়া হবে না!

অস্কারে ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ৮০ থেকে ৯০টি ছবির মধ্যে লড়াই হয়। এর মধ্যে ৭-৮টি ছবি সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পায়। টরন্টো উৎসবের পিপল’স চয়েস অ্যাওয়ার্ডকে হলিউডের পুরস্কার মৌসুমে সাফল্য পাওয়ার প্রভাবশালী অর্জন হিসেবে দেখা হয়। এর আগে এই অ্যাওয়ার্ড জয়ী ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’, ‘দ্য কিংস স্পিচ’ ও ‘টুয়েলভ ইয়ারস অ্যা স্লেভ’ অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া টরন্টোতে পিপল’স চয়েস অ্যাওয়ার্ড জেতা সর্বশেষ ১০ ছবির মধ্যে ৯টিই অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পায়।

চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সাড়া ফেলার পাশাপাশি অস্কারে জমা দেয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের বড় কোনো পরিবেশনা সংস্থাকে সঠিকভাবে ছবি সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়। অস্কারের দৌড়ে বাংলাদেশের ছবি যেতে যেতে অন্যান্য দেশের ছবির স্ক্রিনিং ও এজেন্ট বুকড হয়ে যান। এটা হয় দেরিতে ছবি পাঠানোর কারণে।

অন্যদিকে, প্রচার-প্রচারণায় টাকা হলো আরেক সমস্যা। ১ কোটি টাকাও অস্কার প্রচারণার জন্য নস্যি! অস্কারে পাঠানো ছবি যেন হৈচৈ ফেলতে পারে ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে সেজন্য নির্মাতাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। উপযুক্ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াটাও দরকারি। পশ্চিমা বিশ্বে লবিং কার্যক্রমকে গ্রহণযোগ্য চর্চা হিসেবে দেখা হয়। তাদের নিয়ম মেনেই মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। পুরস্কারের মৌসুম এলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ হয়ে যায় বিয়েবাড়ির মতো! তারা ব্যবসা চায়, তাই সেভাবেই এগোতে হবে।

কিন্তু এ দেশের বেশিরভাগ নির্মাতার কাছে এসব নিয়ম অজানা। কীভাবে এগোতে হবে তা নিয়ে কোনো গেম প্ল্যানও থাকে না তাদের। অস্কারের পেছনে টাকা খরচ করলে টাকা আসে। সেরা ছবির ট্রফি বক্স অফিসে বাড়তি টাকা নিয়ে আসে। সেজন্য ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে ভোটারদের সঙ্গে লাঞ্চ, স্ক্রিনিং, ককটেল রিসিপশন ও প্যানেল ডিসকাশনে তুমুল ব্যস্ত থাকেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকাররা।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ