ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিনেমার পোস্টারে বাঁক বদল

প্রকাশনার সময়: ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৩৫

আগে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী। সিনেদুনিয়ায় এই লোককথার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। দর্শকের কাছে সিনেমাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেশ বড় ভূমিকা রাখে পোস্টার। বলতে গেলে পুরো সিনেমাকেই এক ঝলকে উপস্থাপন করে একটি পোস্টার। যা দেখে প্রথমে দর্শক সিনেমা দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

জনসাধারণকে প্রেক্ষাগৃহে এসে সিনেমা দেখার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রচারণার যে পন্থাগুলো অবলম্বন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম ‘সিনেমার পোস্টার’। বর্তমান সময়ে ঢাকাই সিনেমার বেশির ভাগ নির্মাতা ও প্রযোজকরা আলাদা ধরনের পোস্টার ডিজাইন নিয়ে ভাবছেন ও সেভাবে পোস্টার প্রকাশ করছেন।

অনেক সিনেমার পোস্টারে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেলেও বর্তমান সময়ের বেশকিছু সিনেমার পোস্টারে নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ‘পদ্মাপুরান’, ‘ঢাকা ড্রিম’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, ‘কালবেলা’, ‘কসাই’ ছবিগুলোর পোস্টারে সেই চিত্রই প্রকাশ পায়। এর আগে ‘ভালোবাসার রঙ’, ‘ডুব’, ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’, ‘ঢাকা’, ‘গণ্ডি’, ‘নবাব এলএলবি’ ছবির পোস্টারেও সেই বাঁক বদলের ছোঁয়া প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘রিকশা গার্ল’, ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’, ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, ‘শান’, ‘ওরা ৭ জন’ সিনেমাগুলোর প্রকাশিত পোস্টারে রয়েছে নান্দনিক ছোঁয়া।

চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, একটি সিনেমার পোস্টার কালের সাক্ষী হয়ে থাকে। ভালো পোস্টার একটি সুন্দর চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। এখনকার নির্মাতা-প্রযোজকরা সিনেমার পোস্টারে তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন।

বাংলা সিনেমার পোস্টার অনেকদিন ধরেই ডিজাইন করছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম। এ পর্যন্ত ‘মুসাফির’, ‘কিস্তিমাত’, ‘বিজলী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘জান্নাত’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’সহ মোট ৪০টির মতো পোস্টার ডিজাইন করেছেন তিনি। বর্তমান সময়ের সিনেমা পোস্টার ডিজাইনের বিষয়ে সায়েম বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে বেশকিছু সিনেমার পোস্টারে দেখা যায় নায়ক-নায়িকার গলা কেটে পোস্টার ডিজাইন করা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। বেশির ভাগ নির্মাতা কিংবা প্রযোজক চান তার সিনেমার পোস্টারে নান্দনিকতা থাকুক। ভিন্নতা ও দর্শকদের জন্য আর্কষণীয় কিছু থাকুক পোস্টারে। বর্তমানে অনেক পরিচালক ভিন্ন স্টাইলের পোস্টার চাইছেন। তবে তারা শুটিং শেষ করে একদম শেষ সময়ে এসে ভাবেন। সিনেমার গল্প, নায়ক-নায়িকা নির্বাচনের সময়ই যদি পোস্টার ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলা হয় তাহলে পোস্টারটি আরো সুন্দর হতে পারে। বলতে গেলে, অনেক পরিবর্তন এসেছে, সামনে আরো সমৃদ্ধ হবে বাংলা সিনেমার পোস্টার ডিজাইন।’

তবে পোস্টারে গর্ব করার মতো সৃজনশীলতা থাকলেও দর্শকদের তা খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারছে না। গত অক্টোবরে মুক্তি পায় নির্মাতা রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরান’। সে সময় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে পোস্টার নিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারা এই সিনেমাটির পোস্টার দেখার পর বুঝতে পারছেন না এটি কীসের পোস্টার, সিনেমার না অন্যকিছুর! তাদেরকে তখন বলা হয়, ‘এটি নতুন একটি সিনেমার পোস্টার। করোনার কারণে অনেক দিন সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর আবারো খুলছে। নতুন নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। আপনারা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন।’

প্রত্যুত্তরে একজন বলেন, ‘এখন আর সিনেমার পোস্টার দেখে হলে যাওয়ার দিন নাই। সেই দিন চলে গেছে। রাজ্জাক-ফারুক, শাবানা-ববিতারা যখন অভিনয় করতেন, তখন সিনেমার পোস্টার দেখে বোঝা যেত, সিনেমায় কী হতে পারে। এখন সিনেমা হলের যে পরিবেশ আর সিনেমার পোস্টারে থাকে একটা, পর্দায় আর সেই দৃশ্য থাকে না। এইগুলো ফটো তোলা!’

শতাব্দীর শোবিজের সঙ্গে পথচারীদের আলাপচারিতায় এমন চিত্রই উঠে আসে। এছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ সিনেমাই মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। ফলে দর্শকদের কাছ থেকে আরো কিছু ভিন্ন ভাবনাও পাওয়া গেছে। তাদের অনেকের অভিযোগ, ‘চার-পাঁচশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে গেলে, যদি ভালো সিনেমা না-ই পাওয়া যায় তবে পয়সা উসুল হয় না।’

মূলত পোস্টার বিষয়ে কথা বলতে বলতেই এই প্রসঙ্গগুলো উঠে আসে। যদিও রুচিশীল দর্শকের কাছে, হালের পোস্টারগুলোর এক ধরনের আবেদন রয়েছে। আর তারাই সে সিনেমার দর্শক। তবে এই শ্রেণির দর্শকের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ