ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১০০ মাল্টিপ্লেক্স শেষ ভরসা!

প্রকাশনার সময়: ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:২০

নব্বই দশকে সারাদেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টির মতো। মানসম্মত সিনেমার অভাবে হলবিমুখ হতে শুরু করে দর্শক। আর এর ফলে ভাটা পড়ে সিনেমা হলের ব্যবসায়। দর্শক খরায় বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হলের দুয়ার। বর্তমানে সিনেমা হলের এই সংখ্যা কমতে কমতে ৬২টিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

তবে আধুনিকায়নের এই যুগে আশার সঞ্চার করছে মাল্টিপ্লেক্স। চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালকদের মতে, মাল্টিপ্লেক্সই এখন শেষ ভরসা। কারণ সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর একজন প্রযোজক সেখান থেকে টিকিট বিক্রির বড় অংকের টাকা পান।

জানা যায়, মাল্টিপ্লেক্স থেকে টিকিট বিক্রির অর্ধেক টাকা পান প্রযোজকরা। বর্তমানে সিঙ্গেল স্ক্রিনের সিনেমা হলের টিকিট মূল্য ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। আর মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে টিকিটের মূল্য সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। মাল্টিপ্লেক্সে অন্য সিনেমা হলের তুলনায় কম লোক হলেও টিকিটমূল্যের কারণে টাকার ভাগ বেশি পান একজন প্রযোজক। এছাড়া অত্যাধুনিক মাল্টিপ্লেক্সে ই-টিকিটিং সিস্টেমের কারণে কয়টা টিকিট বিক্রি হলো, তা সহজেই বোঝা যায়। আর সাউন্ডসিস্টেম ও সিনেমা হলের পরিবেশ অন্য হলগুলো থেকে অনেক বেশি ভালো থাকায় দর্শক সিনেমা দেখায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এজন্য কম বাজেটের, সুন্দর গানের, ভালো গল্প, ভালো মেকিংয়ের ছবি হলেও মাল্টিপ্লেক্স থেকে একজন প্রযোজকের টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা বেশি।

বর্তমানে সারাবিশ্বের সঙ্গে একইদিনে দেশে মুক্তি পাচ্ছে বিদেশি সিনেমা। এর মধ্যে বেশকিছু বিদেশি সিনেমা বেশ ভালো ব্যবসাও করেছে। ‘অ্যাভেঞ্জারস’ সিরিজের ‘অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার’ সিনেমার পর এখন সিনেপ্লেক্সে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’। জানা যায়, স্টার সিনেপ্লেক্সে এই সিনেমার প্রথম ৬ দিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে! এই সিনেমার টিকিট বিক্রির হিসাব করলে, দেশে কতগুলো মাল্টিপ্লেক্স নির্মিত হলে নব্বই দশকের সিঙ্গেল স্ক্রিনের সমান ব্যবসা হতে পারে সেই ধারণা পাওয়া যায়।

স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় প্রতিদিন ১৮টি শো, সীমান্ত স্কয়ারে ১১টি, মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারে ১১টি ও মিরপুরের সনি স্টারে প্রতিদিন ১৪টি শো। অর্থাৎ একদিনে ৫৪টি শো চলে সিনেপ্লেক্সের সব শাখা মিলিয়ে। সিঙ্গেল স্ক্রিনের তুলনায় সিট সংখ্যার হিসেবে দিনে ৪টি করে শো ধরলে, প্রতিদিন প্রায় ১৪টি সিঙ্গেল স্ক্রিনের সমপরিমাণ শো পেয়েছে এই চার মাল্টিপ্লেক্স। নব্বই দশকে যেহেতু ১৪০০’র বেশি সিনেমা হল ছিল, আর আসন সংখ্যার বিচারে চার সিনেপ্লেক্সের সমান সিট ছিল প্রতিটি সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহে। এর থেকে একটা ধারণা করা যায়, সারাদেশে প্রায় ১০০ মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করা হলে আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে সিনে ইন্ডাস্ট্রি।

প্রসঙ্গত, কেবল বিদেশি সিনেমা দেখার জন্যই হুমড়ি খেয়ে পড়েন না দর্শক। মানহীন সিনেমার বদলে মন ছুঁয়ে যায়, এমন সিনেমা প্রদর্শিত হলেও দর্শকরা হলমুখী হন। অতীতে এমনটা দেখা গেছে ‘চকোরী’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘রংবাজ’ ও ‘এই ঘর এই সংসার’সহ বেশকিছু সিনেমার ক্ষেত্রে। এমনকি ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে ‘মনপুরা’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘আয়নাবাজি’সহ কয়েকটি সিনেমা হিট করে। তাই মানসম্মত সিনেমা ও প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ ভালো হলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে ইন্ডাস্ট্রি এমনটাই মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশে ৬৮টি অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর বেসরকারি পর্যায়ে স্টার সিনেপ্লেক্স দেশজুড়ে আধুনিক প্রযুক্তির সিনেমা হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এত দিন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তাদের উদ্যোগে ঢাকার বাইরে বগুড়ায় চালু হয়েছে মধুবন সিনেপ্লেক্স। পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, রাজশাহী ও সৈয়দপুরেও নির্মাণ হচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা। সারাদেশে বর্তমানে ৮ থেকে ১০টি মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে। এই সংখ্যা আর সিনেমা নির্মাণ বাড়লে বাঁচতে পারে সিনেমা শিল্প।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ