কলকাতার এক চিত্রপরিচালকের কাছ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। অনেক বছর আগে তাকে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে তিনি কাজটি করেননি। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইলে এমনটা দাবি করেন তসলিমা।
পশ্চিম বঙ্গের খ্যাতনামা পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের রহস্য সিরিজ 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি' দেখার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তসলিমা। সেখানেই নিজের অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি জানান তিনি। সৃজিতের এই সিরিজে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘মুসকান জুবেরী’ ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের আজমেরি হক বাঁধন।
তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, হইচইএ লগ ইন করার ইউজার নেম পাসোয়ার্ড সবে দিন তিনেক হলো পেয়েছি। মন্দারের একটি এপিসোড দেখার পর দেখলাম সৃজিতের 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'। এর প্রতিটি এপিসোডই দেখেছি। যে দেশে ক্রাইম সবচেয়ে কম সেই সুইডেনে ক্রাইম ফিকশান খুব জনপ্রিয়, যে সাদামাটা বাংলায় রহস্য বলতে বেশি কিছু নেই, সবই দিনের আলোর মতো পরিস্কার, সেই বাংলায় রহস্য উপন্যাস খুব জনপ্রিয়। ছোটবেলায় রাত জেগে কত শত রহস্য উপন্যাস যে পড়েছি!
এই সিরিজের যে ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লেগেছে তা হলো যেহেতু দুই বাংলার অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় করছেন, তাই ঘটনা ঘটিয়েছেন বর্ডারের কাছের শহরে। কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু। গল্পে বাংলাদেশ থেকে যে এসেছে, সে বাংলাদেশের অ্যাকসেন্টে বা উচ্চারণে বাংলা বলছে, আর যে পশ্চিমবাংলায় বড় হয়েছে, সে পশ্চিমবাংলার, মূলত কলকাতার উচ্চারণে বাংলা বলছে। ব্যাতিক্রম বাংলাদেশ থেকে আসা আতর আলীর চরিত্রে অভিনয় করা পশ্চিমবঙ্গের অনির্বাণ ভট্টাচার্য । তিনি এমনই রপ্ত করেছেন বাঙাল উচ্চারণ, যে, তাঁকে প্রায় নিখুঁতই বলা যায়। বিরল প্রতিভা বটে। মুসকান জুবেরির চরিত্রে বাঁধন যতই চেষ্টা করুন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চারণে বাংলা বলতে, তাঁর বাঙাল উচ্চারণ বেরিয়ে এসেছে। সেই উচ্চারণ মানিয়ে যায়, কারণ গল্পে তাঁর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশে।
আমাকে অনেক বছর আগে কলকাতার এক চিত্রপরিচালক অনুরোধ করেছিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয় করতে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, চরিত্রটির কোথায় জন্ম, কোথায় বড় হওয়া। পরিচালক বলেছিলেন, কলকাতায়। তখন আমি বলে দিয়েছি, আমি অভিনয় করবো না, কারণ আমার উচ্চারণ কলকাতার উচ্চারণের মতো নয়। দীর্ঘদিন কলকাতার মানুষের সঙ্গে কথা বলে কলকাতার উচ্চারণ সামান্য রপ্ত করেছি বটে, তবে অভিনয় করতে হলে সামান্য হলে চলে না, সবটা হওয়া চাই। আমি ভানু বন্দোপাধ্যায় নই। তিনি দুটো অঞ্চলের উচ্চারণই সমান দক্ষতার সঙ্গে বলতে পারতেন। দীর্ঘদিন নয়, দীর্ঘযুগ কলকাতায় বাস করার ফল সেটি।
কলকাতার লোকেরা আর ঢাকা ময়মনসিংহের লোকেরা বাংলা বলার সময় মুখের যে পেশি ব্যবহার করে তা ভিন্ন। ফ্রান্সের লোকেরা ফরাসি বলার সময় মুখের যে পেশি ব্যবহার করে, সে পেশি ফরাসি বলার সময় কানাডার ফরাসি-ভাষী নাগরিকেরা বা সুইৎজারল্যান্ডের বা বেলজিয়ামের ফরাসি-ভাষী নাগরিকেরা ব্যবহার করে না। তাই তাদের ফরাসি শুনতে ফ্রান্সের ফরাসি থেকে আলাদা।
জয়া আহসান যখন কলকাতার মেয়ে চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন তাঁর কথা শুনলে তাঁকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কারণ যতই চেষ্টা তিনি করুন, তিনি যে কলকাতার মেয়ে নন, তা তার উচ্চারণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ