প্রেক্ষাগৃহে মূলধারার ছবি নেই অনেকদিন। মূলত করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিরাজ করছে এই অবস্থা। শেষ দফার লকডাউন উঠে গেলে মুক্তি পেয়েছিল নির্মাতা অনন্য মামুনের ‘নবাব এলএলবি’। এ ছবিতে অভিনয় করেন শাকিব খান, মাহিয়া মাহি, অর্চিতা স্পর্শিয়া, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি প্রথমে একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিমিং হওয়ার পর নতুন চলচ্চিত্রের খরায় ফের এটি দ্বিতীয় দফায় মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। এছাড়া গত ১ অক্টোবর মুক্তি পায় নির্মাতা আসিফ ইকবাল জুয়েলের ‘চোখ’। এ সিনেমার প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেন নিরব হোসেন, শবনম বুবলী ও জিয়াউল রোশান। এটি মুক্তি পেয়েছিল সারাদেশের ৩৬টি সিনেমা হলে। কিন্তু সেইভাবে দর্শক আলোচনায় আসতে পারেনি চলচ্চিত্র দুটি।
অন্যদিকে গত ৮ অক্টোবর মুক্তি পায় নির্মাতা রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরান’। পদ্মা পাড়ের মানুষের গল্পে নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেন প্রসূন আজাদ, সাদিয়া মাহি, শম্পা রেজা, জয়রাজ, সুমিত সেনগুপ্ত, কায়েস চৌধুরী, সূচনা শিকদার, রেশমী, হেদায়েত নান্নু, আশরাফুল আশিষ, সাদিয়া তানজিন প্রমুখ। ২২ অক্টোবর মুক্তি পায় নির্মাতা প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’। এতে অভিনয় করেন ফজলুর রহমান বাবু, শাহাদাৎ হোসেন, মুনীরা মিঠু, আবদুল্লাহ রানা, শাহরিয়ার ফেরদৌস, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, পূর্ণিমা বৃষ্টি, নাইরুজ সিফাত, সায়মা নীরা, সায়কা আহমেদ, সুজাত শিমুল, ইকবাল হোসেন, আরশ খান, ফজলুল হক, আক্তার হোসেন, জামাল রাজা, আর এ রাহুল, ফারুক আহমেদ, শরিফুল আজম, এস এম মহসিন, মাহবুবুর রহমানসহ অনেকে। কিন্তু করোনার শঙ্কা তখনো কাটেনি দর্শকের মাঝে। ফলে সেই অর্থে দর্শক টানতে পারেনি বিকল্প ধারার এ ছবিগুলো।
এদিকে গত ১৫ অক্টোবর মুক্তি পায় নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’। হাতেগোনা কয়েকটি হলে মুক্তি পায় এটি। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর জীবন কাহিনির ওপর নির্মিত এ ছবি মুক্তির আগে দেশের বাইরে বেশকিছু ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। নিরীক্ষাধর্মী এ চলচ্চিত্রটি নিয়ে রুচিশীল দর্শকদের আগ্রহ থাকলেও ছবি দেখার পর এই প্রতিবেদকের কাছে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। শ্যামলী সিনেমায় রাতের শোতে ডিলাক্স গ্যালারিতে সেদিন ছিল মাত্র ৩ জন দর্শক। আর প্রিমিয়াম গ্যালারিতে চলচ্চিত্রটির কলাকুশলীসহ ছিলেন ১৫-১৬ জন। বিকল্প ধারার সিনেমা দেখার রুচি যেহেতু এখনো তৈরি হয়নি, তাই কম সংখ্যক দর্শক সিনেমাটি দেখবেন এমনটাই বাস্তবতা।
এদিকে বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহে চলছে বাংলাদেশ থেকে কান উৎসবে প্রথমবার অফিসিয়াল মনোনয়ন পাওয়ার চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। কান উৎসব ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রশংসিত হয় এ ছবি, এমনকি অনেক ফেস্টিভ্যালে জিতে নেয় সেরা ছবি ও অভিনেত্রীর পুরস্কার। গত ১২ নভেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত এই ছবি। মাত্র ১০টি প্রেক্ষাগৃহে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে চলচ্চিত্রটি। নারীর সংগ্রাম ও সংকটকে গল্পে আবর্তিত এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। এছাড়াও রয়েছেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াছির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু প্রমুখ।
মুক্তির প্রথম দিনেই দুপুর ১২টার শোয়ে মধুমিতা সিনেমা হলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আবেদ নামে এক দর্শকের; তিনি এক বাক্যে বলে দেন, ‘ছবি দেখে ভালো লেগেছে।’ যদিও এদিন সিনেমা হলে দর্শক ছিল মোটে ১১ জনের মতো। কিন্তু দর্শক প্রসঙ্গে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘দর্শক কম, কারণ আমাদের দেশে এ ধরনের সিনেমা দেখায় এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি মানুষ। এছাড়া করোনার শঙ্কা তো আছেই। আর মধুমিতায় মূলত শাকিব খান বা বাণিজ্যিক ঘরানার দর্শকই বেশি আসেন!’
কিন্তু বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। রুচিশীল দর্শকদের কমবেশি ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তাদের অনেকেই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন, যা পজিটিভ।
আগামী ২৬ নভেম্বর মুক্তির অপেক্ষায় আছে নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘আয়না’ ও নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’। গত কয়েক মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিকল্প ধারার ছবিগুলো। অনেকে বলছেন, বাণিজ্যিক ধারার ছবির নির্মাণ কমে যাওয়াতে বিকল্প ধারার সিনেমাই ভরসা হয়ে উঠছে। এটাকে ইন্ডাস্ট্রির বাঁক বদলও বলছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। যদিও ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছাড়া বিকল্প ধারার অন্য ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহে তেমন দর্শক ফেরাতে পারেনি।
এছাড়া বিকল্প ধারার মধ্যে আলোচনায় রয়েছে ‘রিকশা গার্ল’, ‘পায়ের তলায় মাটি নেই’, ‘অন্যদিন..’। আগামীতে মুক্তি পাবে এই ছবিগুলো। এদিকে সিনেমা হল মালিকরা জানান, বিকল্প ধারার ছবি দেখার দর্শক এমনিতেই কম। তাই বাণিজ্যিক ধারার নতুন ছবি না এলে দর্শক সংখ্যা বাড়বে বলে মনে হয় না। আগামীতে বিগ বাজেটের সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে হয়তো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে!
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ