অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা দেশের টিভি নাট্যজগৎ। একক কিংবা ধারাবাহিক নাটক ইউটিউবে প্রকাশ মাত্রই লাখ লাখ ভিউ হয়। এর মধ্যে ধারাবাহিক নাটকগুলোতে নতুন-পুরনো মুখের পদচারণা থাকে। কিন্তু একক নাটক গল্পে কিছুটা বৈচিত্র্য থাকলেও যেন ঘুরেফিরে একই জুটির বাজিমাত।
তরুণ প্রজন্মের কাছে নিশো-মেহ্জাবীন জুটি দারুণ জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের দেখা গিয়েছে ভিকি জাহেদের ‘পুনর্জন্ম’, কাজল আরেফিন অমির ‘টম এন্ড জেরি’, শিহাব শাহীনের ‘প্লাস ফোর পয়েন্ট ফাইভ’, আশফাক নিপুণের ‘তুমি না থাকলে’ নাটকগুলোতে।
এদিকে অপূর্ব-মেহ্জাবীন জুটিও দারুণ সাড়া ফেলে দর্শকের মাঝে। এই জুটিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘যদি কোনদিন’, মহিদুল মহিমের ‘শনির দশা’ ও সোহেল আরমান পরিচালিত ‘অন্য এক প্রেম’সহ বেশকিছু নাটকে।
জোভান-তানজিন তিশা জুটিও বাজিমাত করে চলেছে একের পর এক নাটকে। নাট্যনির্মাতা নাজমুল রনির ‘ক্রাইম পার্টনার’, ওসমান মিরাজের ‘এক্স যখন কলিগ’, ইমরাউল রাফাতের ‘পাপ্পু ওয়েডস পিংকি’সহ বেশকিছু নাটকে।
এদিকে অপূর্ব-সাবিলা নূর জুটির রয়েছে একচেটিয়া নাটকের কাজ। এছাড়া নাটকে তাহসান-মীম, ফারহান-কেয়া পায়েল জুটির চমকেরও শেষ নেই।
অপূর্ব-সাবিলা নূরকে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় রুবেল হাসানের ‘আগডুম বাগডুম’ ও ‘এক্সচেঞ্জ’, শিহাব শাহীনের ‘পাশের বাসার ছেলেটা’সহ বেশকিছু নাটকে। গায়ক-অভিনেতা তাহসান ও অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মীমের সর্বশেষ বাজিমাত করা নাটকের মধ্যে রয়েছে কাজল আরেফিন অমির ‘হ্যালো বেবি’ এবং ওসমান মিরাজের ‘হঠাৎ বিয়ে’ নাটক দুটি। অন্যদিকে, ফারহান ও কেয়া পায়েলকে দেখা যায় মাবরুর রশিদ বান্নাহর ‘ম্যাড ম্যান’, জাকারিয়া সৌখিনের ‘পারবোনা ভুলতে তোকে’সহ বেশ কিছু নাটকে।
মূলত টিভি নাটকে এই জুটিগুলো বেশ প্রশংসিত। পরিচালক-প্রযোজকরা তাদের নিয়ে নাটক বানালেই সুপারহিট। তবে জুটিগুলো যেন ‘একই পর্দায় একসঙ্গে দুজনে’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃত্ত ভাঙতে দেখা যায় না সচরাচর। এমনকি পরিচালকের গণ্ডিটাও একই। নির্দিষ্ট জুটিতে নির্দিষ্ট পরিচালকের সঙ্গেই যেন তারা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নাটকে এমনটা কেন হচ্ছে, এ সম্পর্কে জানতে গিয়ে একাধিক পরিচালকের সঙ্গে শতাব্দীর শোবিজের কথা হয়। তারা অনেকটা একই ধরনের অভিযোগ করেন।
জানা যায়, ইদানিং একক নাটকের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে প্রযোজক বা পরিচালক, এমনকি অভিনয় শিল্পীদের কারণেই। অভিনয়শিল্পীরা কাজ করতে গেলে তার বিপরীতে কে কাজ করবেন সেই বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেন। এতে পরিচালক অনেকটা শিল্পীদের কাছে জিম্মি হয়ে যান। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো, জনপ্রিয় জুটিদের নিয়ে নাটক বানালে প্রযোজক পাওয়া যায় সহজেই। তবে নাম প্রকাশে একজন পরিচালক বলেন, ‘প্রযোজকের কারণেই এমনটা ঘটে বেশি। অভিনয়শিল্পীরা যতটা না, শিল্পী বাছাইয়ে তার চেয়ে বেশি নির্দেশনা থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের।’
একক নাটকে কেন একই জুটি নিয়ে কাজ করার প্রবণতা বাড়ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রিয় অভিনেতা বলেন, ‘দেখেন, আমরা কাজ করি পরিচালকের নির্দেশনায়। গল্প বলেন আর শিল্পী বলেন সবকিছুই নির্বাচন করেন প্রযোজক-পরিচালক। অভিনয়শিল্পীরা শুধু পরিচালকের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে থাকেন। তবে শিল্পীদের মধ্যেও যে এ বিষয়ে পরামর্শ একেবারেই থাকে না, তা বলব না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েও থাকে। কারণ একজন শিল্পী যদি পরিচিত কোনো শিল্পীর সঙ্গে আগে কাজ করে থাকার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সেটে তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাত্রাটা আরো ভালো হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া বর্তমানে টিভি নাটকের বিভিন্ন সার্কেলে বিভক্ত। বলা যেতে পারে দলীয়করণ। তারা একসঙ্গে বেশকিছু নাটকে অভিনয় করে যাচ্ছেন।’
টিভি নাটকে সার্কেল জটিলতা, নির্দিষ্ট পরিচালকের বাইরে গিয়ে নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ার প্রবণতা, জুটিবদ্ধ অভিনয় করতে চাওয়ার দিন_এগুলো কার লাভ বা কার ক্ষতি হচ্ছে? এমন প্রশ্নে একই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘ক্ষতি তো মূলত ইন্ডাস্ট্রির। বেশি সংখ্যক পরিচালক থাকলে কাজের সংখ্যা আরো বেড়ে যেত। এছাড়া অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও কিন্তু ভেতরে ভেতরে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে, এটা চিরায়ত। তবে শিল্পীরা যদি দ্বন্দ্ব ভুলে কিংবা ঈর্ষাপরায়ণতা ত্যাগ করে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় মনোযোগী হতো তবে আরো বৈচিত্র্যময় কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। তারা যদি সব সময় জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে চায়, তবে এখানে শিল্পী বা পরিচালকের কিছু করার থাকে না।’
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ