ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রথমকে ছাড়াতে পারেননি তারা

প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২১, ০৭:১৬

একজন সংগীতশিল্পীর কাছে প্রথম অ্যালবামের স্মৃতি মাত্রই প্রথম প্রেমের মতো আবেগীয়। এমনকি অনেক শিল্পী প্রথম অ্যালবামে যেভাবে শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যান, অন্য অ্যালবামগুলো সেই রেকর্ড কোনোভাবেই ভাঙতে পারে না।

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে ধ্রুপদী গানের শিল্পী ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মাদ চৌধুরী। প্রথম দিকে টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়েই সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। নব্বই দশকের শেষ দিকে তার প্রথম মৌলিক অ্যালবাম ‘জীবনানন্দ দাশ’। এই গানটি শিল্পীকে শ্রোতাদের মাঝে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। যে গানের কথায় নিয়াজ মোহাম্মাদ চৌধুরীর শ্রোতা মাত্রই আবেগাপ্লুত বোধ করেন। যদিও ২০১৩ সালে স্বনামে এই শিল্পীর একক অ্যালবাম ‘ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী’ প্রকাশ পায় জি-সিরিজ থেকে। এবং শিল্পীর দাবি, এটাই তার প্রথম একক অ্যালবাম।

এই অ্যালবামের জন্য গান লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ, মনিরুজ্জামান, মুন্সী ওয়াদুদ ও কণ্ঠশিল্পী নিজেই। সবকটি গানের সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। আর সংগীতায়োজন করেছেন বাপ্পা মজুমদার। অ্যালবামে রয়েছে ‘ঝরঝর বৃষ্টি তুমি ঝরো না’, ‘ডেকো না পিছু ডেকো না’, ‘গভীর রাতে সূর্য খুঁজি’ ও হারানো দিনের স্মৃতিসহ ১০টি গান। তবে ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মাদ চৌধুরীর কণ্ঠে ‘জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আজও আমি’ গানটি শ্রোতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

গীতিকার, সুরকার, সংগীতপরিচালক ও গায়ক তপন চৌধুরী। ‘সোল্স’ ব্যান্ডের সাবেক সদস্য। ব্যান্ডটির সঙ্গে ২২ বছর কাজ করার পর তিনি একক সংগীতশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে নিজ নামে ‘তপন চৌধুরী’ শিরোনামে প্রকাশ করেন প্রথম মৌলিক অ্যালবাম। আইয়ুব বাচ্চুর সুর-সংগীতে এই অ্যালবামটির সবগুলো গানই শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়। যদিও এর আগেই ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি পরিবেশন করার পর সেটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গানটি ‘সোল্স’র প্রথম অ্যালবামেও ছিল। এরপর নানান সময়ে ‘অপরাজিতা’, ‘তুমি নীল আকাশ’, ‘অনুশোচনা’, ‘স্মৃতির চিহ্ন’, ‘আমার পৃথিবী’সহ অনেক অ্যালবাম বাজারে আসে।

‘তোমার কোন দোষ নেই’ শিরোনামে ১৯৯৬ সালে বের হয় শিল্পী মনির খানের প্রথম অ্যালবাম। এই অ্যালবামের সুরকার, গীতিকার এবং সংগীত পরিচালক ছিলেন মিল্টন খন্দকার। বিউটি কর্নারের ব্যানারে এই অ্যালবামের ১২টি গানের মধ্যে ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া এ অ্যালবামের ‘অঞ্জনা হয়তো এ গান, ‘সাদা কাপড় পরলে’, ‘বুকের মাঝে সুখের কাঁটা’ ও ‘প্রতিদিন দেখা হতো সাতবার’ গানগুলোও ছিল দর্শকদের প্রিয় গানের তালিকায়। প্রথম অ্যালবামে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর মনির খান রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। এরপর মনির খান আর থেমে থাকেননি। একের পর এক গানের অ্যালবাম বের করেছেন। সুদীর্ঘ সংগীত জীবনে তিনি ৪২টি একক অ্যালবাম এবং ৩০০’র অধিক দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ আজও শ্রোতাদের কথায় মনির খানের সবচেয়ে হিট অ্যালবাম।

১৯৮৯ সালে মিল্টন খন্দকারের কথা ও সুরে সেলেক্সের ব্যানারে প্রকাশ পায় ডলি সায়ন্তনীর প্রথম একক অ্যালবাম ‘হে যুবক’। তখন এই শিল্পী নবম শ্রেণির ছাত্রী। প্রথম অ্যালবামের ‘হে যুবক’, ‘এই নিঝুম রাত’ ও ‘কালো মাইয়া’ গানগুলো ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে শ্রোতাদের মাঝে। নব্বই দশকের গানপাগলরাতো বটেই, এই প্রজন্মের অনেকের কাছেও ডলি সায়ন্তনীর ‘হে যুবক’ গানটি হয়ে উঠেছে ফেনোমেনন। এ পর্যন্ত ১৫টি একক এবং শতাধিক দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবামে সাতশ’র বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। কিন্তু প্রথম অ্যালবাম ‘হে যুবক’ শ্রোতাদের কাছে যেমন সাড়া পেয়েছিল, অন্য অ্যালবামগুলো এর ধারেকাছেও নেই।

সংগীতশিল্পী আসিফের প্রথম অ্যালবাম ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। এই অ্যালবামের কথা, সুর ও সংগীতায়োজনে ছিলেন ইথুন বাবু। আসিফের প্রথম অ্যালবামটি রীতিমতো দেশব্যাপী ঝড় তুলেছিল। অ্যালবামের ১২টি গানের মধ্যে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ ছিল সুপারহিট। এই অ্যালবামটিই শ্রোতাদের কাছে সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি এনে দেয় আসিফকে। এই অ্যালবামের ‘কখনো ভালোভাসোনি’, ‘এখনো মাঝে মাঝে’, ‘জীবনের বড় পরাজয়’, ‘এত কষ্ট মেনে নেয়া যায় না’ ও ‘ক্ষমা করে দাও আমাকে’ গানগুলোও পেয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়। অ্যালবামটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক জানায়, সে সময়ে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’-এর ৬০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল। ইতোমধ্যে আসিফ প্রায় আড়াই হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, কিন্তু প্রথম অ্যালবামের মতো এতটা বাজিমাত করতে পারেনি অন্য অ্যালবামগুলো।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ