ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভিলেন ক্যারিশমা শেষ!

প্রকাশনার সময়: ১০ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩০

ঢালিউডের কমার্শিয়াল ছবিতে রাজত্ব করে নায়ক-নায়িকা ও ভিলেনরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ভিলেন কিংবা খলচরিত্রে এককভাবে রাজত্ব করে আসছেন মিশা সওদাগর। এই অভিনেতার বাইরে ভিলেন হিসেবে দু-একজনকে দেখা গেলেও তারা যেন খুব একটা ক্যারিশমা দেখাতে পারছেন না। প্রায় এক হাজার ছবিতে অভিনয় করা মিশা যেন এখন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।

এছাড়া মিশা ছাড়া অন্য কোনো খল অভিনেতা ঢালিউডে নিজের আসন পোক্ত করতে পারেননি। একটা সময় সবাইকেই নানা বেড়াজালে থেমে যেতে হয়। এখন মিশা সওদাগরও যদি কখনো ফুলস্টপ টানেন সময়ের প্রয়োজনে ঢাকাই ছবিতে ভিলেন হিসেবে হাল ধরবেন কে বা কারা? শিমুল খান, ডিজে সোহেল, শিবা শানু, জিয়া ভিমরুল, টাইগার রবি- তাদের বড় জোর প্রধান খলনায়কের পার্শ্ব খলচরিত্র হওয়ার মতো অভিনয় শিল্পী বলে মনে করেন দর্শক। এদিকে তরুণদের কেউ খল অভিনেতা হতেও চাচ্ছেন না। নায়িকাকে পাশে পাবেন বলে সবাই ‘নায়ক’ই হতে চান। কিন্তু কেবল নায়ক-নায়িকা নয়, দর্শকের মনে একজন দক্ষ খল অভিনেতাই গোটা চলচ্চিত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। একটি সিনেমার ক্লাইমেক্স-অ্যান্টি ক্লাইমেক্সের কেন্দ্রে থাকেন একজন খল অভিনেতা। নায়ক-নায়িকা শুধু রোমান্টিকদের জন্য আর খলনায়ক সবার জন্য।

শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিবেশের মধ্য দিয়ে খল অভিনেতাই একটি সিনেমার সার্থক সমাপ্তি টানেন। প্রথম ঢাকাই সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশে’ প্রধান চরিত্রই ছিল ইনাম আহমেদের। তিনি এই সিনেমায় ভিলেন হিসেবে ফুটিয়ে তুলেন নিজেকে। অভিনয়ের দিক থেকে খল চরিত্র নায়কের চাইতেও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।

ঢালিউডের ছবিতে ভিলেন হিসেবে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন ফতেহ লোহানী, দারাশিকো, খলিল, গোলাম মুস্তাফা, রাজু আহমেদ, এটিএম শামসুজ্জামান, আরিফুল হক, বাবর, আদিল, কায়েস, আহমেদ শরিফ, কেরামত মাওলা, জুবের আলম, রাজিব, রাজ, মেহফুজ, জাম্বু, হুমায়ুন ফরীদি, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চু, ডিপজল, ডন, ড্যানি সিডাকসহ আরো অনেকে।

নায়কদের মধ্যেও অনেকে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। যেমন গোলাম মুস্তাফা, খলিল, আলমগীর, ওমর সানী, অমিত হাসান প্রমুখ। অভিনয়ে দক্ষতা অর্জন করেই খল অভিনেতা হিসেবে নিজেদের ফুটিয়ে তুলেছিলেন গোলাম মুস্তাফা, রাজিব, খলিল, হুমায়ুন ফরীদি। ভিলেন হওয়ার আগে তারা অভিনেতা হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে ‘গাইতে গাইতে গায়েন’ হওয়ার মতো ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ কম। নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে দীর্ঘ সময় নেয়া যায়। খলনায়ক হিসেবে শুরুতেই বাজিমাত করেন হুমায়ুন ফরীদি। তবে দক্ষতার অভাবে ঢালিউডে খল চরিত্রের সংকট চলছে এখন।

অথচ ষাটের শুরু থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত খল চরিত্রের কোনো সংকট ছিল না ঢাকাই সিনেমায়। একই সঙ্গে অনেক খলচরিত্র মিলে একটা বৈচিত্র্যও ছিল। এখন মিশা ছাড়া উল্লেখযোগ্য খল কোথায়? ডিপজল ছিলেন। অনেকদিন হলো তিনিও খল চরিত্রে নেই। জসিমের মতো চরিত্র বদল করেছেন। তার মানে ঢাকাই সিনেমায় খলনায়কের মাঠে বেশ বড়সড় ফাঁকা অবস্থা চলছে।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন, চলচ্চিত্রে এখন আগের মতো খল অভিনেতাদের ক্যারিশমা নেই! দর্শকরা হুমায়ূন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান, সাদেক বাচ্চু, নাসির খানদের মতো ভয়ঙ্কর খল অভিনেতারও দেখা নেই অনেকদিন। তবে চলচ্চিত্র পরিচালকদের কেউ কেউ এই সংকটকে অস্বীকার করতে চান। তারা বলেন, ‘খলনায়কের সংকট কোথায়, ছবিই তো হচ্ছে না। এখন ছবিও নেই, খলনায়কও নেই। সংকট হচ্ছে ফাইন্যান্সারের, প্রডিউসারের।’

তবে নতুনদের কেউ কেউ সেই শূন্যতা পূরনের চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম রাশেদ মামুন অপু ও তাসকিন আহমেদ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাশেদ মামুন অপু জানান, তিনি প্রতিষ্ঠিত খলনায়ক হতে চান। বলেন, ‘আমি নেগেটিভ চরিত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানে অভিনয়ের জায়গা বেশি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অবস্থানে এখানে হিরো হতে পারব না। ক্যারেক্টর আর্টিস্টদের তেমন কিছু করার থাকে না। প্রভাব থাকে নায়ক নায়িকা এবং খলনায়কের। এজন্য খলনায়ক হতে চেয়েছি।’

ইতোমধ্যে ‘নবাব এলএলবি’র পর ‘জানোয়ার’ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাশেদ অপু। এদিকে তাসকিন আহমেদকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় খল নায়ক হিসেবে দেখা গিয়েছে। বর্তমান সিনেমার বাস্তবতায় খল অভিনেতাদের ক্যারিশমা ফুরিয়ে গেলেও নতুনদের মধ্যে আশার আলো ফুটবে বলে মনে করেন অভিনেতা অমিত হাসান বলেন, ‘কারো জন্যই কোনো কিছু থেমে থাকে না। শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার মতো অনেক শিল্পী আছেন। এটা ঠিক, আগে একসঙ্গে অনেক খল অভিনেতা ছিলেন। কথায় আছে না, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ