সম্প্রতি সিনেমা রিভিউয়ার ও পরিচালকদের নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে শোবিজ অঙ্গনে। মূলত নির্মাতা রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরান’ মুক্তির পর ফেসবুকে তিনি তার সিনেমার রিভিউ কেন হচ্ছে না এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এমনকি সিনেমা রিভিউয়ের জন্য তার কাছে লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উত্থাপন করেন গণমাধ্যমে।
নির্মাতা রাশিদ পলাশ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘তার মানে শুধু টাকা দিতে পারিনি বলে সিনেমার রিভিউ করলেন না সিনেমা প্রেমিক সৈয়দ নাজমুস সাকিব। আপনাদের বাংলা সিনেমার প্রতি এই দরদটা মনে থাকবে ভাই। কী মনে হয়, আপনারা না লিখলে সিনেমা চলবে না? কিংবা টাকা না দিলে পোলাপান দিয়ে নেগেটিভ রিভিউ করাবেন? দিন বদলে গেছে ভাই। আটকাতে পারবেন না। পদ্মাপুরান ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, বাংলা সিনেমায় সুদিন ফিরছে, ইন্ডিয়ান সিনেমা বাজী হল থেকে নেমে যাচ্ছে, উঠছে পদ্মাপুরান, বাংলা সিনেমা, বাংলাদেশের সিনেমা।’
নির্মাতা রাশিদ পলাশের সুর ধরে আরো অনেক নির্মাতাই এই ধরনের প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে সেই স্ট্যাটাসের নিচে অভিযুক্ত সৈয়দ নাজমুস সাকিব আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘আপনি কোন যুক্তিতে এই আলাপ করলেন? একটা প্রমাণ দেখাতে পারবেন যে আমি টাকা চেয়েছি আপনার কাছে বা কারো কাছে লেখার জন্য? আপনার সিনেমার ইংরেজি সাবটাইটেল করার জন্য আমাকে দিলেন, নিজের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য আমি সেটা করতে পারিনি, এরপরেও আমি আমার এক ছোট ভাইকে দিয়ে করালাম। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনার সিনেমাটা আমার ভাল্লাগে নাই। সেজন্য আমি কিছুই বলিনি।
বললে শেষে আপনারাই বলেন- আপনাদের মতো লেখকদের জন্য আমাদের সিনেমার উন্নতি হয় না। এত ভুল ধরেন কেন? আর সব ঠ্যাকা আমাকেই কেন নিতে হবে? সব কেন আমাকেই লিখতে হবে? আমার জীবন নাই? আপনার সিনেমা ভালো হলে আমি না লিখলে খারাপ হয়ে যাবে? এও সম্ভব? কনফিডেন্স নাই আপনার নিজের সিনেমার উপরে?
লাস্ট অনেকদিন আমি দেশি কন্টেন্ট নিয়ে একদম লিখি না আপনাদের এরকম আচরণের জন্য। চন্দ্রাবতী কথা ভালো লেগেছিল, তাই নিজের তাগিদেই লিখেছি। ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসা করে দেইখেন কোনো টাকা নিয়েছি কিনা। শুধু টাকার জন্য কাজ করলে, সিনেমার জন্য প্যাশন না করলে নিজের প্ল্যাটফর্ম সিনেগল্প থেকে আলাদা করে কন্টেন্ট বানাতাম না আপনার সিনেমার প্রসূন আজাদ আর সুমিত সেনগুপ্তকে নিয়ে। এখনো পেজে আছে সেটা। নিজের পেজ থেকে আপনার সিনেমার পোস্টার আর ট্রেলার শেয়ার দিতাম না যদি শুধু টাকার কথা ভাবতাম। চমৎকার প্রতিদান দিলেন ভালোবাসার।’
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে নির্মাতা রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ও প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’। এ দুটি চলচ্চিত্র নিয়েও রিভিউ গ্রুপগুলোতে বা পেজে তেমন লেখালেখি নেই, কিন্তু মূল বিষয় হলো একজন নির্মাতা যেমন তার চলচ্চিত্র নির্মাণে স্বাধীন, তেমনই একজন রিভিউয়ারও স্বাধীন। রিভিউয়ারদের কোনো দায় নেই যে, এই সিনেমার রিভিউ করতেই হবে। কারো যদি সিনেমা দেখে ভালো অথবা মন্দ লাগে, তবে সেই ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় সেই সিনেমা নিয়ে রিভিউ দিতেই পারেন কিংবা নাও দিতে পারেন। এটা রিভিউয়ারদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রফেশনাল রিভিউয়ার থাকেন। তারা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন। ফলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমার সমালোচনা বা রিভিউ করে থাকেন তারা। যেমন পাশের দেশ ভারতে সেরা রিভিউয়ারদের মধ্যে রয়েছেন অনুপমা চোপড়া, বিকাশ মিশ্র, তরণ আদর্শ (ইন্ডিয়া এফএম), বরদ্বাজ রঙ্গন (দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু), সি এস ভেঙ্কিটেশ্বরন (দ্য হিন্দু); হলিউডে রয়েছেন জেমস এজি (টাইম, দ্য ন্যাশন), ডেভিড আনসেন (নিউজউইক)। তারা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বা পত্রিকার হয়ে মুভি রিভিউ করে থাকেন। কিন্তু ঢালিউডে তেমন প্রফেশনাল রিভিউয়ারের সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। এমনকি দুই-একটি পত্রিকা ছাড়াও বাকিগুলোতে সিনেমা নিয়ে কোনো ক্রিটিক বা রিভিউ হয় না।
এছাড়া প্রফেশনাল রিভিউয়ার যখন কোনো সিনেমা নিয়ে নেগেটিভ রিভিউ করেন তখনো এ নিয়ে দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশ তৈরি হয় না। এমনকি পরবর্তী সিনেমার মুক্তির সময় ওই পরিচালক ঠিকই আবার সেই রিভিউকারীর অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে কথা বলেন এবং সেই রিভিউকারীও আবারো রিভিউ দেন, কিন্তু ঢালিউডে কোনো ব্যক্তি বা পত্রিকা একজন পরিচালকের সিনেমা নিয়ে নেগেটিভ রিভিউ করলে পরবর্তীতে সেই পরিচালক ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো কথাই বলতে চায় না। এই হলো বাস্তবতা! যেখানে রিভিউকারীদের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই, সে ক্ষেত্রে একটা সিনেমা মুক্তি পেলেই তা নিয়ে রিভিউকারীর দায় কেন থাকবে?
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ