বিশ্ব চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘অস্কার’। ১৯৫৬ সালে এই উৎসবটিতে যুক্ত হয় বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগ। ২০০২ সাল থেকে ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’র মাধ্যমে অস্কারে বাংলাদেশের ছবি পাঠানো শুরু হয়। গত ১৮ বছরে অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছে ১৫টি বাংলাদেশি ছবি।
বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে ২০০২ সালে অস্কারে যায় নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। ছবিটি চূড়ান্ত পুরস্কারের জন্য মনোনীত না হলেও ছিল আলোচনায়। এরপর দুই বছর কোনো বাংলাদেশি ছবি অস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ছবি তিনটি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, আবু সাইয়িদের ‘নিরন্তর’ এবং গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘স্বপ্নডানায়’। যার মধ্যে ‘স্বপ্নডানায়’ ছবিটি নিয়ে হলিউডের বিখ্যাত ভ্যারাইটি, নিউইয়র্ক টাইমস, হলিউড রিপোর্টসহ চলচ্চিত্র বিষয়ক বিখ্যাত সব সংবাদপত্রে প্রশংসিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আর আশার আলো জ্বলেনি।
এরপর ২০০৬ সালে যায় এনামুল করিম নির্ঝরের ‘আহা!’, ২০০৯ সালে আবার গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ছবি। এটার নাম ‘বৃত্তের বাইরে’। অস্কারে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মনোনীত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারকীর ছবি। ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে প্রতিনিধিত্ব করে তার ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’ এবং ‘ডুব’। ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে কোনো ছবি যায়নি অস্কারে। ২০১২ সালে যায় হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
২০১৪ সালে যায় খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘জোনাকির আলো’, ২০১৫ সালে আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প’, ২০১৬ সালে তৌকির আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং ২০১৭ সালে যায় আকরাম খানের চলচ্চিত্র ‘খাঁচা’। ২০১৯ সালে অস্কারের জন্য মনোনীত হয় নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ‘আলফা’ এবং ২০২০ সালে যায় অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘ইতি তোমারই ঢাকা’। এ বছর অস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছে নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এই ছবিটি এর আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আ সার্তে রিগা’ বিভাগে প্রতিযোগিতা করেছে।
প্রতিবারই সিনেমাপ্রেমীদের মনে বাড়তি কৌতূহল থাকে অস্কারে যাওয়া ছবিগুলো নিয়ে। কিন্তু অবশেষে শূন্য হাতেই ফিরতে হয় বাংলাদেশি নির্মাতাদের। এর পেছনে কারণও রয়েছে অনেক রকম। বাংলাদেশে বছরজুড়ে নির্মিত হয় যে ছবিগুলো তার একটি-দুটি ছবিও অনেক সময় ভালো মানের হয়ে ওঠে না। এমনো হয়েছে, অস্কারের জন্য বাংলাদেশ কমিটির হাতে কোনো ছবিই জমা পড়ে না। এমনকি এ বছরো একমাত্র ছবি হিসেবে জমা পড়ে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। অথচ পাশের দেশ ভারতই কোন ছবি রেখে কোন ছবি অস্কারে পাঠাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অস্কার কমিটি।
অন্যদিকে, ঢালিউডে এমন ছবি আসে যে, সেটির নাম ঘোষণা করলে ফেডারেশনের নাক কাটা যাবে! তখন তারা কোনোমতে মান বাঁচবে এমন ছবি জমাদানে উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে অস্কারে ছবি পাঠানোর বিষয়ে রয়েছে দেশীয় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ। এতোসব কারণের পরেও কি আর বলার দরকার পড়ে, কেন এই শূন্য হাতে ফেরা?
এবার আসা যাক অস্কার পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। অস্কারে শুধু ছবি পাঠিয়ে বসে থাকলে হবে না। প্রতি বছর এই বিভাগে ৮৫ থেকে ৯৫টি ছবি জমা পড়ে। সবাই হয়তো মনে করতে পারেন তার দেশের ছবি এবার অস্কার জিতবে। সেটা তারা ভাবতে পারে কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়নে জায়গা পাবে ৫টি ছবি। জমাদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আরো মেলা পথ পাড়ি দেয়া লাগে ছবিগুলোর ক্ষেত্রে।
একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস কর্তৃপক্ষ বিদেশি ভাষার ছবির নির্ধারণ করে দেয় তিনটি স্ক্রিন। আর এই তিন স্ক্রিনে ঝরে অধিকাংশ ছবি। যে ছবিগুলো থেকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয় লবিস্ট। যাদের কাজই থাকে জুরিদের কাছে সংশ্লিষ্ট ছবিটি নিয়ে দেনদরবার করা। অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের আট হাজার জুরি সদস্যের বেশিরভাগই গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ছবি দেখে থাকেন।যেমন কান, টরন্টো, ভেনিস, বার্লিন, ট্রাইবেকা, সানড্যান্স। এসব আয়োজনে কোনো ছবি প্রশংসা কুড়ালে অস্কার সম্ভাবনা জাগতে শুরু করে। তখন সনি পিকচার্স ক্ল্যাসিকস কিংবা ফক্স সার্চলাইট পিকচার্সের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উত্তর আমেরিকায় পরিবেশনার দায়িত্ব নেয়। এভাবে ধীরে ধীরে সুযোগ সৃষ্টি হতে থাকে। এখন বলা অসম্ভব বাংলাদেশের কোন ছবি কবে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোতে হৈচৈ ফেলতে পারবে। তেমন হাইপ সৃষ্টি করা কঠিন।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ