সিনেমায় নতুনরা এলেও, পুরনোদের ওপরই মূলত নির্ভরশীল পরিচালক-প্রযোজকরা। নায়িকা বলতে এখনো শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, শবনম বুবলী, মাহিয়া মাহি, ববি হক, নুসরাত ফারিয়া, পরীমণি। পরিচালকরাও তাদেরকে নিয়েই সিনেমা বানাতে আগ্রহী। পুরনোদের ভীড়ে নতুনদের নিয়ে খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না পরিচালক। ফলে তরুণ তুর্কিরা আর খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেন না। টিকে থাকার লড়াইয়ে এক সময় পিছু পড়ে থাকে নতুনরা। অনেকে হয়তো সিনেমাকেও ‘গুডবাই’ বলে।
যেহেতু একটি সিনেমায় কোটি টাকার ওপরে খরচ হয় আবার সেটি তুলতে হয় সাধারণ মানেুষের কাছ থেকে তাই সব নির্মাতা বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায় নির্ভরযোগ্য নায়ক-নায়িকা নিয়ে কাজ করতে, যাদের নাম শুনে দর্শক হলে আসবে। এছাড়া পুরনোদের ফ্যান-ফলোয়ারও তাদেরকে সিনেমায় নিতে এক ধরনের প্রভাব রাখে। এই ক্ষেত্রে নতুন যারা তাদের ঘটে বিপত্তি।
সালমান শাহ, মৌসুমী, শাকিব খানদের মতো তারকারা যার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আলো জ্বালিয়েছেন, তিনি সোহানুর রহমান সোহান। এই পরিচালক বলেন, ‘শিল্পী তৈরি করতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। একসময় ঝুঁকি নিয়েই নতুনদের দিয়ে অনেক পরিচালকই কাজ করেছেন। সেই নতুনরাই একপর্যায়ে জনপ্রিয় তারকা হয়েছেন। কিন্তু এখন তো কেউই ঝুঁকি নিচ্ছেন না।’
তবে তিনি জানান, দুয়েকজন যে নতুনদের নিয়ে ঝুঁঁকি নিচ্ছেন না, ঠিক তা নয়। সোহানুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু তাদের তো কোনোরকম অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ছাড়াই ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে অচিরেই ঝরে যাচ্ছেন তারা।’
এছাড়া দর্শকদের অভিযোগ রয়েছে, নতুনরা অভিনয়ে তেমন দক্ষতার পরিচয় কিংবা দাগ কাটতে পারছে না। পরিচালক সোহানের মতে, ‘নতুনদের প্রস্তুত করে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো হলে কাজের মান বাড়বে, দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পাবেন তারা। তখনই শিল্পীর সংকট কাটবে।’
পুরনোরা পরীক্ষিত, এই বিষয়টিও কাজ করে পরিচালকদের ভাবনায়। এ ক্ষেত্রে চলে আসে নতুনদের ‘ধৈর্য পরীক্ষা’র কথা। পরিচালকদের অনেকের অভিযোগ, ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে আগের নায়িকাদের মধ্যে যেমন চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, ধৈর্য, সুশৃঙ্খলতা ছিল এখন তা নেই। এখনকার শিল্পীরা শিল্পী না হয়ে তারকা খ্যাতির পেছনে ছুটেন। যোগ্যতার চেয়ে সম্মানী বেশি দাবি করে বসেন বলেই গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন।’
এদিকে, দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পরিচালকরা অগ্রাধিকার দেয় তারকা জুটির। অনেক নায়িকা আবার সিন্ডিকেটে জায়গা করে নেন। যার ফলে সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে নতুন মুখের আর জায়গা হয় না।
১৯৮৪ সালে এফডিসিতে ‘নতুন মুখের সন্ধান’ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াতে আসা সুব্রত, সোহেল চৌধুরী, দোয়েল, দিতি, মান্নাসহ অনেক শিল্পীই দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের পরপর নতুন মুখের শিল্পী আবিষ্কারের প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। আর তার প্রভাব পড়ে পরবর্তীতে। পরিচালকদের অনেকেই বলছেন, ওই সময় থেকেই মূলত শিল্পী-সংকটে পড়েছে ঢাকার চলচ্চিত্র। কারণ হিসেবে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, ভালো পরিচালকের অনুপস্থিতি, বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসাই ছবিতে বড় বাজেটের ঘাটতি, গল্পেরও অভাব। ফলে ভালো মানের ছবি তৈরি হচ্ছে না। বেরিয়ে আসছে না মেধাবী নতুন শিল্পী।
এছাড়া বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতাও চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে দূরে টেলে নায়িকাদের। যে কারণে শেষমেষ কেউ আর এই পথে ভরসা পায় না।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ