করোনা মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে দেড় বছর পর মুখর হওয়ার অপেক্ষায় চলচ্চিত্রাঙ্গন। আজ থেকে একে একে মুক্তি পেতে চলেছে ৮টি নতুন চলচ্চিত্র। অক্টোবরে প্রেক্ষাগৃহে আসার তালিকায় রয়েছে সোহেল মোহাম্মদ রানার ‘মুজিব আমার পিতা’, অনন্য মামুনের ‘কসাই’, আসিফ ইকবাল জুয়েলের ‘চোখ’, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’, রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরাণ’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ও অংশুমান প্রত্যুষের ‘বাজি’ সিনেমাগুলো।
করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে এতদিন পর নতুন সিনেমার মুক্তিতে আশার সঞ্চার হচ্ছে সিনেমা হল মালিকদের মাঝে। ঢাকার ফার্মগেটের আনন্দ ও ছন্দা সিনেমা হলের সহকারী ম্যানেজার আলাউদ্দিন বলেন, ‘এতদিন নতুন কোনো সিনেমা ছিল না। পুরনো সিনেমা দিয়েই আমরা হল খুলেছি। নতুন সিনেমা না থাকায় দর্শক কম ছিল।’
শতাব্দীর শোবিজকে তিনি জানান, গত ২০ আগস্ট হল খোলার পর থেকে ‘নবাব এলএলবি’, ‘ফিফটি ফিফটি লাভ’, ‘অঙ্গার’ ও ‘পাষাণ’ এই চারটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। দর্শকও দিন দিন বাড়ছে। ম্যানেজার আলাউদ্দিন বলেন, ‘নতুন ছবি মুক্তি পেলে দর্শক আবার হলে ফিরবে বলে আশা করা যায়। ভালো মানের ছবি লাগবে, ভালো গল্পের ছবি লাগবে। তাহলে আবার দর্শক ফিরবে। এখন করোনাকালে দর্শক আসেনি, এখন ধীরে ধীরে আবার বাড়ছে।’
কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার দর্শক আগের চেয়ে কম। ওটিটির জোয়ারে সেই সংখ্যা আরো ঢের কমেছে। এমন চিত্রই উঠে এসেছে নিকুঞ্জ এলাকার কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কথায়।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে পড়ছেন সাইফুদ্দিন ইসলাম। জানান যে নিয়মিতই সিনেমা দেখেন তিনি। তবে হলে খুব একটা যাওয়া হয়ে ওঠে না। নেটফ্লিক্স বা ইউটিউবে সিনেমা দেখেন তিনি। কেন হলে যান না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এদিকে তো সিনেমা হলই নেই। এছাড়া সিনেমা হলে যে রকম সিনেমা চলে, সেগুলোও আমি খুব একটা দেখি না। নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখি। সর্বশেষ দেখেছি ‘মানি হাইস্ট’ সিরিজটি।’
সাইফুদ্দিনের মতো একই কথা বলেন আরো কয়েকজন। তারা সিনেমা হলে এক সময় গিয়ে সিনেমা দেখলেও গত পাঁচ বছরে সিনেমা হলে যাননি। কথায় কথায় জাহাঙ্গীর নামে একজন বলেই ফেললেন, ‘টাকা দিয়া কি ছারপোকা কিইন্না আনমু!’ এই দর্শক জানান, এক সময় সিনেমা হলে গিয়ে প্রায়ই সিনেমা দেখতেন তিনি। তার সবশেষ দেখা সিনেমা সিয়াম আহমেদের ‘পোড়ামন ২’ (রায়হান রাফির পরিচালনায় এই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৮ সালে)। তবে জাহাঙ্গীর এখন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আগ্রহ পান না। কারণ? ‘এখনকার নায়ক-নায়িকার মধ্যে অভিনয়শিল্পীর মতো ব্যাপারটা নাই। এই সময়ের চারজন নায়কের কথাও কইতে পারমু না আমি। আগে যেমন ফারুক ছিলেন, গ্রামের যে কোনো গল্পে তারে খুব মানাইতো। কিন্তু এখন নায়ক-নায়িকারে দেখলে মনে হয় জোর কইরা অ্যাক্টিং করতেছে।’ এই হলো সিনেমা দেখার দর্শকদের চিত্র। তবে গল্পনির্ভর বা মানসম্পন্ন ছবি যাই হোক না কেন, প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ উন্নত না হলে দর্শক টানা কঠিন, পরিচালকরাও জানেন এ কথা।
আগামী ১৫ অক্টোবর ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’।
দর্শক হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে এই নির্মাতা বলেন, ‘দর্শক তো এমনিতে ভালো ছবি দেখতেই চাই; একটু ভিন্ন ধরনের ছবি। আমাদের দর্শক হারিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এফডিসি কেন্দ্রিক ছবিগুলোর মানের অভাব। এছাড়া আপনি জানেন যে ম্যধবিত্তরা এখন আর সিঙ্গেল স্ক্রিন হলগুলোতে যায় না, সিনেপ্লেক্স বা মাল্টিপ্লেক্সে ছবি দেখেন। তাই আমরা ভাবতেছি এখন যারা হলে গিয়ে ছবি দেখেন সেই অডিয়েন্সরা সাড়া দেবেন। আমরা স্যোসাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন করছি, দেখা যাচ্ছে সিনেমাটির (চন্দ্রাবতী কথা) প্রতি অনেকেরই আগ্রহ আছে।’
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ