চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে দীর্ঘ এক পোস্ট করেছেন।
ফারুকী লেখেন, ‘একবার ভাবুন, মাসের পর মাস একটা মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেউ জানে না সেটা। একদিন সকালে উঠে দানবদের সর্দারের মনে হইলো, মেজাজটা ভালো না। যাই বন্দিদের মধ্যে একটাকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলি। তারপর মেরে শীতলক্ষ্যায় লাশটা ফেলে দিলো।
‘ঘরে ফিরে যে যুবকের সন্তানকে ভাত মেখে খাওয়ানোর কথা, সে হয়ে গেলো মাছেদের খাবার। শীতলক্ষ্যার শান্ত জলে কান পাতলে আজীবন শোনা যাবে সেই হতভাগ্য পিতার কান্না। এটা আমার বাল্যবন্ধু সাজেদুল ইসলাম সুমনের গল্প। এরকম অজস্র সুমনের গল্পই এক। আমরা সবাই ছিলাম একেকজন সুমন। ’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনি আপনার হাত থেকে এ নিষ্ঠুরতার দাগ মুছতে পারবেন না। অমানুষ জিয়াউল, তোমার হাত থেকে এই দাগ মুছবে কীভাবে? এরকম শত শত মানুষের গল্প আছে, একই রকম বেদনার। এই রকম ঠান্ডা মাথায় খুন, অত্যাচার কোনো সুস্থ লোকের পক্ষে সম্ভব না। দিজ আর সাইকোপ্যাথস!’
‘সুতরাং, অনেক কিছুর ভিড়ে আমরা যেন ভুলে না যাই, আলাপের আসল প্রসঙ্গটা! অ্যাটেনশন ঘুরিয়ে দেওয়া, যখন যে কনভারসেশন হওয়ার কথা, তা না হয়ে অন্য কনভারসেশন চালু করে দেওয়া- এটি আধুনিককালে ফ্যাসিস্টদের অনেক টেকনিকের একটি। ’
তিনি লেখেন, ‘আসল প্রসঙ্গ হলো, একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কেন হয়েছে? একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি ১৫ বছর মানুষ মেরেছে, গুম করেছে, যাকে গুম করেছে, তার বাসায় গিয়ে তার মেয়েকে জড়িয়ে মায়াকান্না করেছে, মানুষজনকে উঠতে বসতে তাচ্ছিল্য করেছে, আয়নাঘর বানিয়েছে, কথা বললেই পিটিয়েছে, ভোটের নামে মশকরা করেছে, ব্যাংক লুটপাট করতে দিয়েছে, শেষ সাত দিনে ৪০০ মানুষ খুন করেছে, আরও খুন করার জন্য সেনা-পুলিশদের চাপ দিয়েছে, শেষে সারা দেশের মানুষের ঘৃণা সাথে নিয়ে দেশ ছেড়ে গেছে। ’
‘গণহত্যা এবং সব প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য একটা বিশেষ আদালত তৈরি করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে এটা যেন প্রভাবমুক্ত ন্যায় বিচার হয়। তাতে যার যা অপরাধ, সে ঐ পরিমাণ সাজা পাবে। আর যে অপরাধী না, সে খালাস পাবে। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ পাপমুক্ত হবে। ’
তিনি লেখেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি। আর নাকের ডগায় ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে না? এ বিচার করতে হবে যাতে আর কেউ ক্ষমতায় গিয়ে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সাহস না করে, সে যে দলেরই হোক। রিফর্মের শুরু হবে এখান থেকেই। ’
চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারুকী আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। তার মতে, দেশ গঠনের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যৌক্তিক। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে সন্ত্রাসীদের হামলা বলে উল্লেখ করেছিলেন।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ