ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাবুল গোমেজ থেকে যেভাবে হয়ে উঠেছিলেন জনপ্রিয় জাম্বু

প্রকাশনার সময়: ০৩ মে ২০২৪, ১৮:০১ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১৮:০৮

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা জাম্বু। ছোট বড় সবার কাছেই তার নামটি বহুল পরিচিত। জন্ম ১৯৪৪ সালে ঢাকাতে। মূল নাম সুখলাল বাবু। জন্ম ও পৈতৃক স্থান পুরান ঢাকার হাজারিবাগের গণকটুলি সিটি কলোনিতে। মেথরপট্টি হলেও আজিমপুরের ভাটা মসজিদের পাশেই চারতলা বাড়িতে থাকতেন তিনি। বাবুল গোমেজ নামে এন্ট্রি হন প্রথমে এফডিসিতে। পরে পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু তার নাম দেন জাম্বু। আজ এই অভিনেতার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৪ সালের ৩ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

বাবুল গোমেজ থেকে জাম্বু হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, সেটা ১৯৭২ সালের ঘটনা। আমি তখন পপুলার স্টুডিওতে লিডার সিনেমার শুটিং করছিলাম। পপুলার স্টুডিওটা নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার আগে। এটা বাংলাদেশের প্রথম পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের স্টুডিও ছিল। শুটিং চলাকালীন দেখি একটা ছেলে আসছে লম্বাচওড়া। জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? বললো, বাবুলাল। জিজ্ঞেস করলাম অভিনয় করবে? সে বলল, হ্যাঁ করবে। আমি তখন বলি শর্ত রয়েছে একটা।

সেই শর্ত প্রসঙ্গে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া দেশের সংস্কৃত পুননির্মাণ কাজে ব্যস্ত। হয়তো সে দৃশ্য আরও চোখের সামনে এনে পরিষ্কারভাবে দেখতে চাইলেন। বললেন, ‘আসলে মারপিটের একটা দৃশ্য আছে। বিপরীত দলে বাবুলালের মতো একটা ছেলে থাকলে ভালো হয়। আমি ওকে শর্ত দিলাম মাথা ন্যাড়া করে অভিনয় করতে হবে। সে বলল তাই করবে। এরপর মাথা ন্যাড়া করে দিলাম। সত্যি তাকে এবার বড়সড় একজন মাস্তান লাগছিল। আমি ওর নাম দিলাম জাম্বু।

সাদাকালো সময় থেকে শুরু করে রঙিন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এই খল অভিনেতার লুক ছিল রুদ্রমূর্তির মতো। যা ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ভয়েসেও ছিল সেই রুদ্রতা। সবচেয়ে বেশি তাকে দেখা যেত বস্তি আক্রমণ, সওদা করে খুন, মূল খলনায়কের সহকারী প্রভৃতি ভূমিকায়। পর্দায় তার রসায়ন সবচেয়ে বেশি জমত নায়ক জসিমের সঙ্গে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরমধ্যে ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র মোহাম্মদী বেগ চরিত্র। সেই চরিত্রে জাম্বু ছিল উপযুক্ত। সাহিত্যভিত্তিক সিনেমা ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’র অর্জুন সিং চরিত্রেও বেশ সফল হয়েছিলেন তিনি।

‘হিরো’ সিনেমায় জেলখানায় কয়েদিদের নেতা হয়ে ভয়ানকভাবে হাজির হন জাম্বু। সবার ভাত কেড়ে নিয়ে একাই খেতে থাকেন। জসিমের সঙ্গে তার যুদ্ধ চলে। ‘রকি’ সিনেমায় বক্সার জসিমের সঙ্গে তার ফাইটিং ছিল উপভোগ্য। জসিমের সঙ্গে ‘মোহাম্মদ আলী’ সিনেমায়ও দারুণ রসায়ন ছিল। ‘রাস্তার রাজা’য় জালিম সিং চরিত্রে গেটআপ ছিল রুদ্রমূর্তির। আরও অনেক সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন তিনি।

‘আত্মরক্ষা’ সিনেমায় তিনি হাজির হয়েছিলেন পজিটিভ চরিত্রে। এ সিনেমার নায়ক ছিলেন ‘লাভ স্টোরি’র পল্লব। দুলারীর হুকুমের গোলাম ছিল জাম্বু। তাকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে কাজ করায়। শেষে জাম্বুর হাতেই মৃত্যু হয় দুলারীর। বিচ্ছিন্নভাবে জাম্বুর কিছু গানও আছে কিছু সিনেমায়।

জাম্বু অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে-সাগর ভাসা, এক মুঠো ভাত, রক্তের দাগ, শীষনাগ, সেলিম জাভেদ, হাসান তারেক, নির্দোষ, মোহাম্মদ আলী, ধর্ম আমার মা, ডাকাত, নবাব, রাস্তা, রাস্তার রাজা, রকি, আত্মরক্ষা, পরিবার, সন্ত্রাস, অতিক্রম, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, উত্থান পতন, নয়নমণি, হাবিলদার, বিজয়, ঝুমুর, গোলাবারুদ, বাঘা বাঘিনী, সমর, অপরাজিত নায়ক, আপোষ, বিজলী তুফান, মাটির ফুল, পালকি, রুবেল আমার নাম, আঁচল বন্দী, টাইগার, বনের রাজা টারজান, হিরো, রাজাবাবু, নয়া লায়লা নয়া মজনু, শিকার, শত্রু ধ্বংস, আত্মত্যাগ, ঘাতক, কালিয়া, বন্ধু, সাজা, দোস্ত দুশমন, রাখাল রাজা, নয়নের আলো, বজ্রপাত, খুনের বদলা, অঙ্গার, বিপ্লব, যোদ্ধা, অভিযান, উসিলা, নিষ্পাপ, অমর, মৃত্যুদণ্ড, জ্যোতি, সাথী, মূর্খ মানব, দেন মোহর, প্রেম দিওয়ানা, চাকর, ববি, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, দায়ী কে, মিস লংকা, সাগরিকা, নির্মম ইত্যাদি।

শক্তিমান এই অভিনেতার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় ছেলে ডায়মন্ড একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট ছেলে সাম্বু বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রায় অভিনয় করেন। যাত্রার ব্যানারেও লেখা থাকে ‘জাম্বুর ছেলে সাম্বু’। জাম্বুর ভক্তরা সাম্বুকে দেখতে ভিড় করেন। বাবার কারণেই এই পরিচিতি।

নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ