টলিউড থেকে বলিউড, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় অভিনেত্রী হিসেবে সব ছবিতেই দর্শকদের নজর কাড়েন। অভিনয়ের বাইরে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হিসেবেও নিজের আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছেন। এবার তিনি গুরুতর এক অভিযোগ নিয়ে এলেন সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়।
সেখানে তিনি জানিয়েছেন শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটা ঘটনার কথা সবার সামনে নিয়ে এলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’।
বছর ছয়েক আগে ইনস্টাগ্রামে ‘মিটু’ নিয়ে একটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেন চূর্ণী। সেই পোস্টে চূর্ণী লিখেছিলেন, ‘আমি হয়তো ছোট ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলিনি। শিশু নির্যাতনের এক নীরব শিকারের দীর্ঘ দিনের জমে থাকা কান্না! শুধুমাত্র বলতে পারিনি বলে এত বছর চুপ থাকা।’ সেই পোস্টের কথা পুনরায় উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘অপরাধীর শাস্তি হয়নি। তবে আমার বিশ্বাস কর্মফল পাবে সে।’
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ফেসবুক পোস্টে চূর্ণী লেখেন, ‘আজ প্রায় ৬ বছর আগের একটি খুব ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মনে করছি। তাতে লেখা ছিল, আমি হয়তো তরুণ ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলে যাইনি। #MeToo’ ….'। এরপরই মেয়েবেলায় তার সঙ্গে ঘটা নক্কারজনক ঘটনার কথা ফেসবুকে ভাগ করে নেন চূর্ণী।
অভিনেত্রী লেখেন, ‘আমার ভেতরে লম্বা সময় ধরে এই কান্না জমে আছে, শিশু নির্যাতনের শিকার আমি, নীরব থেকেছি। একজন তার বেড়ে ওঠা বছরগুলোতে চুপ থেকেছে কারণ সে প্রকাশ্যে এই সত্যিটা বলতে পারেনি। সেই অপরাধী স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি পায়নি। তবে আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই, কর্মফল সে ভুগবেই। কিন্তু আমি এখনও তার তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অন্তত এটা সে করতে পারে।’
‘আমাকে যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সারা জীবনের ক্ষত যা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে তার জন্য ক্ষমা তো চাওয়াই উচিত। আমি তার নাম নিতে পারব না এই ভেবে সে হয়তো আরাম করছে এবং ঠিক এটাই তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সি এক কিশোরীর থেকে সুবিধা নিতে বাধ্য করেছে.. যে তার সারাল্যের জেরে তখনও পৃথিবীটাকে চিনে উঠতে পারেনি।’
অতীতের সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী আরও লেখেন, ‘আমার মনে আছে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম এবং পুরোপুরি অবিশ্বাসের মধ্যে ছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি পারতাম ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতাম… গলা শুকনো এবং একটি ভারী হৃদয় নিয়ে, সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি বিধ্বস্ত থাকতাম এবং ভয়ে কাঁপতাম কারণ আমার নিষ্পাপ মন তাকে বিশ্বাস করেছিল। ’
থিয়েটারে মেয়েদের নিরাপদ স্থান পাওয়া নিয়ে বেনি বসুর একটি পিটিশন সই করতে গিয়ে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় দেখেন তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। সেই থেকেই নিজের সঙ্গে ঘটা এই দুর্বিসহ ঘটনা এতদিন পর প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী।
তিনি লেখেন, ‘আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। শুধু থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য নয়, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। পারলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। তাহলেই এই ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপও। আজ, আমি যেভাবে এই ঘটনা শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ।’
তবে আজও নিজের উপর ঘটা অত্যাচার ভোলেননি চূর্ণী, অপেক্ষায় রয়েছেন অপরাধীর ক্ষমাপ্রার্থনার। আজও সে সমাজে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি লেখেন, ‘আমার মনে হয়, তার যৌন বিকৃত স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছে। তার অঙ্গভঙ্গি এবং ভালোমানুষির অভিনয় আজও আমাকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।’
এই পোস্ট সেই সেই নির্যাতনকারীর কাছেও পৌঁছাবে বিশ্বাস তার। চূর্ণীর আশা সেই মানুষ রূপী পশু নিশ্চয় বুঝবে, তিনি ছোট থাকতে পারেন, তবে কোনওকিছু ভোলেননি।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ