শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

গুরুত্ব হারাচ্ছেন দেশীয় নায়িকারা

প্রকাশনার সময়: ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৪

ঢাকাই চলচ্চিত্রে কদর কমে যাচ্ছে দেশীয় নায়িকাদের, হারাচ্ছেন আস্থা। ব্যক্তিগত বিতর্ক, শিডিউল জটিলতা, সময় মেনে না চলা, অতিরিক্ত চাহিদাসম্পন্ন জ্ঞান করা, মিনারেল পানি দিয়ে গোসল করার মতো বায়না ইত্যাদি কারণে নির্মাতারা কলকাতার অভিনয়শিল্পীদের দিকে ঝুঁকছেন।

বরাবরই কলকাতার নায়ক-নায়িকারা এদেশে চলচ্চিত্র করে গেছেন কিংবা ঢাকার নায়ক-নায়িকারা কলকাতায় গিয়ে অভিনয় করেছেন, করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার নায়িকাদের ঢাকাই চলচ্চিত্রে আগমন বহুগুণ বেড়েছে।

এটাকে অনেকেই ‘অ্যালার্মিং’ বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। গত ঈদে শাকিব খানের প্রিয়তমা চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এ পর্যন্ত শাকিব খানের সঙ্গেই কলকাতার নায়িকারা বেশি অভিনয় করেছেন।

এ তালিকায় রয়েছেন শ্রাবন্তী, সায়ন্তিকা, ১৩ বছর আগে এফআই মানিকের ‘সবার উপরে মা’ ছবিতে স্বস্তিকাও শাকিবের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন। সর্বশেষ সর্বভারতীয় চলচ্চিত্র দরদে শাকিবের নায়িকা রয়েছেন সোনাল চৌহান।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকামুখী স্রোত বেড়েছে কলকাতার শিল্পীদের। তবে এটা দেশীয় নির্মাতাদের আগ্রহেই হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ঋত্বিকা, কৌশানি, দর্শনা বণিক, সায়ন্তিকা, ইধিকা পালসহ টালিগঞ্জের শীর্ষ সারির প্রায় সব নায়িকাই এদেশে আসছেন। এক বছরের কম সময়ে ইধিকা পাল বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা করে ফেলেছেন।

এ ছাড়াও আসন্ন অনেকগুলো নতুন সিনেমায় নির্মাতা কলকাতার নায়িকাদের নিয়েই সিনেমা বানানোর কথা ভেবে রাখছেন। ঢাকাই ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের কদর বাড়ার কারণ সম্পর্কে দেশীয় নির্মাতাদের মত, কলকাতার নায়িকাদের নিয়ে কাজ করলে ঝামেলামুক্ত যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়। দেশীয় নায়িকাদের নানা বায়না থাকে, ঠিক টাইমে সেটে উপস্থিত হন না, শিডিউল ফাঁসিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়াও দেশীয় নায়িকারা নানা কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে আনছেন। শাকিব খান বর্তমানে দেশীয় কোনো নায়িকার সঙ্গেই কাজ করছেন না।

সিয়াম, জায়েদ খান, নিরব, শরিফুল রাজ কলকাতার নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় নায়িকাদের এসব জটিলতার ফাঁকেই কলকাতার নায়িকারা তাদের জায়গা দখল করে ফেলছেন। নানা সময়ে শিডিউল জটিলতার খবর জানা গেলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কে এসেছেন বুবলী, পূজা চেরি, দীঘি, মাহি, নুসরাত ফারিয়া, পরীমণি সহ সম্ভাবনাময় ও উঠতি নায়িকারা।

মাহির বিরুদ্ধে একজন প্রযোজক অভিযোগ তুলেছিলেন নায়িকার গোসলের জন্য নাকি মিনারেল পানি রাখতে হবে। নির্মাতা সৈকত নাসিরের মতে, ‘যখন একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত বিষয় প্রকট হয়ে ওঠে, তখন সেটা শুটিংয়ে ঝামেলা ফেলবেই। তবে আমি মনে করি, কলকাতার নায়িকাদের চেয়ে বাংলাদেশের নাটকের নায়িকাদের জনপ্রিয়তাই অনেক বেশি। কেন তাদের নেয়া হয় না, তা আমি জানি না। তবে বাণিজ্যিক সিনেমার ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পীদেরই প্রাধান্য দেব।’

বাংলাদেশের নায়িকারা শুটিং সেটে নানা রকম ঝামেলা করেন, নানা রকম বায়না রাখেন আবার শিডিউল ফাঁসিয়ে দেন। ফলে কলকাতা থেকে নায়িকারা এসে টাইম টু টাইম কাজ করে চলে যান কোনো ঝামেলা নেই। এমনই ভাষ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমনের। তিনি বললেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশে নায়িকা সংকট। আর বাংলাদেশি নায়িকারা অধিকাংশই ব্যক্তিগত ঝামেলায় জড়িয়ে গেছেন। বিচ্ছেদ, মামলা, টাইমিং সমস্যা রয়েছে।

এসব কারণে নির্মাতারা ঝামেলামুক্তভাবে শুটিং শেষ করতে ভারতীয় নায়িকাদের নিয়ে আসছেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিত্রনায়ক বললেন, ‘এই স্রোত আরও বাড়বে। কেননা নায়িকা সংকট, ইমেজ সংকট আর বাজেট একটা বিষয়। একজন নায়কের সঙ্গে যে ধরনের নায়িকা মানাবে, সেটা বাংলাদেশে নিতে গেলে বাজেটে কুলাবে না। কিন্তু অনায়াসে কলকাতা থেকে নায়িকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মিডিয়া কাভারেজের বিষয়টিও হয়তো কলকাতার নায়িকাকে নিলে বেশি পাওয়া যায়।’

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ