জৌলুস হারিয়েছে চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। বেঁচে থেকেও যেন প্রাণহীন! এর সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিস্থিতও এখন এমন। গেল চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না তারা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এফডিসির ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আর কদিন পরই শুরু হচ্ছে রমজান। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন তারা। উপায় না দেখে বেতন-ভাতার দাবিতে আগামী ১১ মার্চ এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে মানববন্ধন করবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতন অনিশ্চিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ এফডিসির আয় কমে যাওয়া। একসময় প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ছিল, সরকারের রাজস্বেও জোগান দিত। বর্তমানে আয় কমার পেছনের কারণগুলো— ৩৫ মিলিমিটারে (সেলুলয়েড) সিনেমা নির্মাণের সময় কাচা ফিল্ম বিক্রয় বা ল্যাব প্রিন্ট হতো। ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর সেটি এখন বন্ধ। এ ছাড়া এফডিসির ভবন নির্মাণে তিনটি ফ্লোর ভেঙে ফেলাতে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ ভাগ আয় কমে গেছে।
পাশাপাশি দেশে সিনেমা হল কমে যাওয়ায় প্রযোজকদের সিনেমা নির্মাণের আগ্রহও কমেছে। বর্তমানে ফ্লোর, ক্যামেরা, ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, বিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয় এফডিসির। তার বিপরীতে ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ-পানির বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ মাসে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা। আয় কমাতে এফডিসি এখন চরম সংকটে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া জানান, সবশেষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য এফডিসির কিছু জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ সরকার ছয় কোটি টাকা প্রদান করে এফডিআর করে রাখে। ওই এফডিআর থেকে ঋণ নিয়ে গত আট মাস ধরে এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। ঋণের পরিমাণ এফডিআরের কাছাকাছি হওয়ায় এখন ঋণ নেয়ার সুযোগও নেই। ফলে গত চার মাস ধরে বকেয়া পড়েছে বেতন-ভাতা।
এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না বলেই এফডিসির হাল এখন বেহাল হয়ে পড়েছে।
গত চার-পাঁচ বছরের অবসরে যাওয়া এফডিসির প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ছুটি নগদায়ন এবং গ্র্যাচুইটি বাবদ পাওনা প্রায় ১৫ কোটি টাকা এখনো বুঝে পায়নি। এফডিসির সূত্রে জানা যায়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্বভুক্ত হলেও জাতির পিতার হাতে গড়া দেশের সবচেয়ে বড় স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি এত বছরেও সরকারের রাজস্বভুক্ত হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ