অরিজিৎ সিং। নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ‘তুমি হি হো’, ‘ফির লে আয়া দিল’, এর মতো হৃদয়ছোঁয়া কিছু গান। ভারতবর্ষে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির একটি বিশেষ নাম অরিজিৎ সিং। যিনি বলিউডডের হিন্দি প্লেব্যাকে এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজত্ব করছেন। তার কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ এই উপমহাদেশের শ্রোতারা।
হিন্দির পাশাপাশি বাংলা গান গেয়েও বিশ্বব্যাপী সমধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন অরিজিৎ। বাংলা ছবিতে অসংখ্য হিট গান রয়েছে অরিজিতের। এমন খ্যাতিমান শিল্পী কিন্তু একজন বাঙালী ও বাংলাভাষী।
বলিউড কিংবা সারাবিশ্বে তিনি একটু আধুনিক বেশে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ কিংবা কলকাতাতে ফিরলেই অরিজিতের জাত বাঙালির ছাপটা ভেসে আসে। তার বাচনভঙ্গিতে যেন বাঙালিয়ানার পরিচিতিটা টের পাইয়ে দেন অরিজিৎ সিং। মঞ্চে উঠে শ্রোতাদের বাংলাতে অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানাতে এক বিন্দুও দ্বিধায় থাকেন না এই গায়ক। তার হাতে থাকা গিটারেও বাংলায় লেখা থাকে ‘সাঁঝবাতি’ আবার কখনও ‘ঝিলিক’, ‘তুলতুলি’, ‘ঝোরা’, ‘ঝিলিক’, ‘মিঠি’- এসব বাংলা শব্দ। এতে পরিস্কার হয়ে যায়; বাংলাকে ঠিক কতটা ভালোবাসেন অরিজিৎ সিং।
ইউটিউব বা ফেসবুকের বিভিন্ন রিলস বা ভিডিওতে অরিজিতের বাংলা ও বাংলাভাষার প্রতি ভালবাসার দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে। ওসব শর্ট ভিডিওতে দেখা যায়, অরিজিৎ যখন তার গ্রামের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে যান, তখন তিনি যেন একজন খাস বাঙাল হয়ে পড়েন। ঢিলে ঢালা শার্ট, শর্ট প্যান্ট ও এক জোড়া চটি পায়ে দিয়েই তার প্রিয় স্কুটি নিয়ে বের হয়ে পড়েন গ্রাম ঘুরতে। কখনও নদীর পাড়ে, কিংবা কখনও বাজারে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেন অরিজিৎ সিং। এ সময় অনেক ভক্তরা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। কিন্তু, এই বিষয়টি অরিজিতের জন্য একেবারেই বিব্রতকর ও অসহনীয়। এমনও হয়েছে, ভক্তরা তাকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তিনি তার প্রতিবাদ করেছেন। আর তার সেই প্রতিবাদের একমাত্র ভাষাটি ছিল ‘বাংলা’।
অরিজিৎ জন্মগ্রহণ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তার বাবা পাঞ্জাবি এবং মা ছিলেন বাঙালি। তার পৈতৃক নিবাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ-এ। অরিজিতের প্রাথমিক জীবনের পুরোপুরি কেটেছে সেখানেই। শৈশবে মায়ের সাথে হারমনিয়ামে বাংলা গান গাইতেন তিনি। এরপর সঙ্গীতের তালিম শুরু করেন গুরু রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে। তবলা শিখেছেন ধীরেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বাংলা লোকসংগীত শিখেছেন বীরেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছে। এটি অন্তত স্পষ্ট যে বাংলার উপর চর্চাটা শৈশব থেকেই ছিলো অরিজিতের। এরপরই চলে যান মুম্বাইতে। ২০০৫ সালে ফেম গুরুকুল নামের একটি রিয়েলিটি শো তে গানের প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ২০১০ সালে প্রখ্যাত সঙ্গীত প্রযোজক প্রীতম চক্রবর্তীর সহকারী শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় অরিজিতের প্লেব্যাক জগতের সূচনা।
অরিজিৎ তার ক্যারিয়ার শুরুর এক দশকের মধ্যেই সুরের মূর্চ্ছনায় বশ করে সারাবিশ্বে তার কোটি কোটি ভক্তের সৃষ্টি করেছেন। তার রয়েছে বিভিন্নভাষীর শ্রোতা। অন্যদিকে অরিজিতের জাতীয়তা ভারতীয়। কাজেই তাকে পরিস্থিতি বুঝে কখনও হিন্দিতে আবার কখনও ইংরেজিতেও মনের ভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়। এছাড়াও অরিজিৎ জীবনের একটি লম্বা সময় কাঁটিয়ে দেন অবাঙালীর ডেরায়। এত লম্বা সময় সরাসরি বাংলার সংস্পর্শ না থাকলেও টালিগঞ্জে বাংলা গান করতে তার একটুও বাঁধে না। সুষ্পষ্ট উচ্চারণ ভঙ্গিমায় দিব্যি গেয়ে যাচ্ছেন বাংলা গান। তিনি পেয়েছেনও ‘সেরা বাঙালী পুরস্কার’ সম্মাননা।
উল্লেখ্য, অরিজিতের ব্যান্ডের গিটারিস্ট জন পল ২০২৩ সালের কলকাতা একুয়াটিকায় এক কনসার্ট শেষে অরিজিৎ কে নিয়ে বাংলা ও বাংলাভাষার প্রতি ভালোবাসা ও অনুভুতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমকে অভিমত দেন। তিনি বলেন, ‘অরিজিৎ নিজে বাংলাকে, বাংলা ভাষাকে ভীষণ ভালোবাসেন।’
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ