হুমায়ূন ফরীদি। তার নাম শুনে মন খারাপ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে খুব কম। বাংলার সিনেমা দর্শকদের কাছে তিনি আফসোসে পরিণত হয়েছেন ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে এদিন বিদায় নেন হুমায়ূন ফরীদি। আজ তার চলে যাওয়ার এক যুগ।
কিংবদন্তি অভিনেতা ফরীদি মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছিলেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তারই প্রমাণ মিলছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সবাই। কেউ লেখছেন মধুর স্মৃতি, কেউ আবার হারানোর বেদনা। পুরোটা দিন নিজের দখলে নিয়েছেন হুমায়ূন ফরীদি।
ফরীদির মৃত্যু যেমন ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্যতা তৈরি করেছে, তেমনি শূন্যতা তৈরি হয়েছে ভক্তহৃদয়েও। আজও সেসব ভক্তদের হৃদয় চির অমলিন। ভক্তরা এখনও তাকে সশ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। আর করবেই না কেন! ফরিদী খুব মেধাবী, সেইসঙ্গে শক্তিমান অভিনেতা। তাকে বলা হত অভিনয়ের কারিগর। নিজের চরিত্রকে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তিনি। দর্শকরাও হারিয়ে যেত সেই অভিনয়ের মায়াজালে।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে আসেন। ফরীদি বেশি সময় খল চরিত্রে অভিনয় করলেও ইতিবাচক চরিত্রে তার অভিনয় ছিল অতুলনীয়। শুধু সিনেমা নয়, টেলিভিশন নাটক এবং মঞ্চেও তার অভিনয় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন দর্শকরা।
তিনি ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্য।
হুমায়ূন ফরীদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে যোগ দেন তিনিও। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি তার পড়াশুনা সম্পন্ন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সেলিম আল দ্বীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের তক্ষক চরিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল তার প্রথম টেলিভিশন নাটক। এরপর তিনি ভাঙ্গনের শব্দ শোনা যায়, সংশপ্তক, দুই ভাই, শীতের পাখি এবং কোথাও কেউ নেই- এর মতো দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন।
মায়ের অধিকার, বিশ্ব প্রেমিক, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, টাকার অহংকার, আনন্দ অশ্রু, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়াসহ অনেক উল্লেখযোগ্য সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। হুমায়ূন ফরীদি অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’।
হুমায়ূন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৬০ বছর বয়সে ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন এই অভিনেতা।
নয়াশতাব্দী/ডিএ/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ