ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্লেব্যাকের মান কমছে কেন

প্রকাশনার সময়: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক কালজয়ী সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। বর্তমানে চলচ্চিত্রের গানের অবস্থা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মধ্যে যে অবস্থা ছিল; খুব খারাপ একটা সময় গেছে। শুধু গানের ক্ষেত্রেই না, আমি বলব ফিল্মের সব ক্ষেত্রেই খুব বাজে একটা সময় গেছে এবং সেটাকে কাটিয়ে উঠতেই অনেক সময় লেগেছে। আস্তে আস্তে এখন ভালো ভাল ছবিও কিছু হচ্ছে, ভাল গানও কিছু বেরোচ্ছে।’

রুনা লায়লা বলেন, ‘আমাদের মেইন প্রবলেম হচ্ছে যে, বড় ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই; প্লাস আমাদের অ্যাকুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের একটা অভাব আছে। আমার মনে হয় যে, আমাদের অ্যাক্যুস্টিক ইন্সট্রুমেন্টের প্লেয়ার আছে, কিন্তু তাদের সেভাবে ইউটিলাইজ করা হচ্ছে না। যার কারণে, আস্তে আস্তে ওই ফ্লোটা মরে গেছে। পুরো গানের সবকিছু একজনই করছে, একজনই সবকিছু বাজিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তো আসলে মজাটা থাকে না। ভায়োলিন থাকল, ফ্লুট থাকল, সান্তুর বা সেতার থাকল, সারেঙ্গি থাকল। এসব কিন্তু আর শোনাই যায় না, গেলেও খুব কম। আর এখন কাজ যেটা হচ্ছে সেটা ঝটপট করে ফেলা।’ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আগে তো আমরা মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে একটা গান তিনদিন রিহার্সেল করতাম, তারপরে দুইদিন মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে ফুল রিহার্সেল হতো; তারপরে আমরা রেকর্ডিংয়ে যেতাম। রেকর্ডিং লাইভ হতো, ইন্সট্রুমেন্টসহ। একটা গান করতে সারাদিন, অনেক সময় সারা রাতও লেগে যেত। লাইভ ছিল, তাই কেউ একজন ভুল করলে আবার নতুন করে শুরু করতে হতো।’

এখনকার শিল্পীদের অনেকের গানের প্রতি সেই আবেগটা কমে গিয়েছে। রানা লায়লা বলেন, ‘এখন ওই ডেডিকেশনটাও কমে গেছে, কাজের যে একটা ফ্লো ছিল, সেটাও নেই। আমরাও এখন অনেকটা লেজি হয়ে গেছি।’

তরুণ সংগীতশিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এক নম্বর কথা হলো, সবার আগে যেটা দরকার, নতুন শিল্পীদের সুযোগ দিতেই হবে। আমাদের ঘরে নতুন শিল্পী তৈরি রাখতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। শুধু নতুন শিল্পী হলেই হবে না, মান থাকতে হবে। ভালো শিল্পী তৈরি করতে হবে। অনেক প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই সুযোগ পাচ্ছে না।’

বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যস্ততা, একাগ্রতার অভাব, অতি সম্মানী হাঁকানোসহ বেশ কিছু কারণেই চলতি সময়ে প্লেব্যাকে তারকা কণ্ঠশিল্পী তৈরি হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংগীতবোদ্ধারা। এ বিষয়ে বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, ‘এখন সবাই গান করছে সাময়িক জনপ্রিয়তার জন্য। এভাবে গান করলে গানই দীর্ঘদিন টিকবে না! আর শিল্পীর টিকে থাকাতো দূরের কথা। গান মনের খোরাক। তাই কথা, সুর, সংগীত ও গায়কির একটি অপূর্ব সম্মিলন প্রয়োজন। আগে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের গানের প্রতি শিল্পী কিংবা সংগীতসংশ্লিষ্টদের ভালোবাসা ছিল। সেই ভালোবাসার বন্ধনটা ছিল খুব শক্ত। আর এখন হয়ে উঠেছে সব যান্ত্রিক। কোনো আবেগ কিংবা ভালোবাসা নেই। সর্বোপরি গানের প্রতি দরদ যদি না থাকে তবে চলচ্চিত্রের গান কেন কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণ সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে না।’

সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, ‘আগে একটি গান তৈরি হতো গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, শিল্পী,

চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পীদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে দু-তিনদিন প্র্যাকটিস হতো। এরপর রাতব্যাপী আমরা গান রেকর্ডিং করতাম। এর মাধ্যমে একটি সুন্দর গান বের হয়ে আসতো। এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে সব সহজ হয়েছে ঠিক কিন্তু গান হয়ে গেলে তরল। সবার মধ্যে খুব তাড়াহুড়ো কাজ করে। স্টুডিওতে ডেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে গান কমপ্লিট হয়ে যাচ্ছে। মায়া, মমতা ও ভালোবাসা যদি কাজের প্রতি না থাকে সে কাজ কখনোই ভালো হয় না। আর এ কারণেই চলচ্চিত্রে কোনো শিল্পী শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারছেন না।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ