ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুন্না ঠাকুর ছাড়া ফটোশ্যুট হয় না অমিতাভ সালমানের

প্রকাশনার সময়: ১০ মে ২০২৩, ১৯:০২
ফাইল ছবি

পকেটে মাত্র ২৪ টাকা আর চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে উপার্জন করবেন বলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে স্বপ্ননগরীতে আসেন আলোকচিত্রী মুন্না ঠাকুর। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে পাড়ি জমান।

খবরের কাগজ বিক্রি করা মুন্না ঠাকুর এখন প্রতি বছর ২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন। পেশায় একজন আলোকচিত্রী। অমিতাভ বচ্চন, তাপসী পান্নু, সুনীল শ‌েট্টি, ইরফান খান, সালমান খানের মতো তারকাদের ছবি তোলেন তিনি। এখন ছবি তুলতে শুধু মুন্নাকেই ভরসা করেন অমিতাভ থেকে সালমান। ৪৭ বছর বয়সি মুন্নার জন্ম মহারাষ্ট্রের আকোলায়। বাবা-মা এবং দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন এক ছাদের তলায়। তুলোর কারখানায় কাজ করা বাবার নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা ছিল। কম বয়সেই দারিদ্র দেখেছিলেন মুন্না।

সংসারের খরচ সামলানোর চিন্তাতেই মগ্ন থাকতেন মুন্না। খরচের জন্য স্কুলের গণ্ডিও পার করতে পারেননি তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আকোলাতেই ছোটখাটো কাজে হাত লাগিয়েছিলেন মুন্না।

সৎপথে উপার্জন করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্কুল ছাড়ার পরেও অন্যান্য কাজের খোঁজে এ দিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতেন মুন্না।

উপার্জনের জন্য দিনমজুর, রংমিস্ত্রির কাজও করেছেন তিনি। আয়ের জন্য তার কাছে যে কাজই আসতো তাই তিনি করতেন।

১৯৯১ সালে ১৫ বছর বয়সে চার বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমান মুম্বাই।

এক সাক্ষাৎকারে মুন্না জানান, পকেটে মাত্র ২৪ টাকা নিয়ে মুম্বাই শহরে পা রাখেন তিনি। মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে কাজ পাওয়া খুব একটা মুশকিল হবে না ভেবেছিলেন কিন্তু সেখানে এসে তার এই ধারণা ভেঙে যায়।

সাক্ষাৎকারে মুন্না জানান, এই শহর তাকে আপন করে নেয়নি। পড়াশোনা বে‌শি দূর না করায় ছোটখাটো কাজই পাচ্ছিলেন তিনি। হিরে কাটা, হিরে পালিশ করা থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিংয়ের দোকানেও কাজ করেছেন মুন্না। প্রায় এক বছর এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তারপর খবরের কাগজ বিক্রির কাজ শুরু করেন তিনি। সকালে খবরের কাগজ বিক্রির করতেন আর দিনের বাকি সময়ে অন্যান্য কাজ করতেন।

১৯৯৩ সালে একটি স্টুডিওতে খবরের কাগজ বিক্রি করা শুরু করেন যেখানে বলিপাড়ার তারকাদের ছবি তোলা হত। স্টুডিওতে কাজ করার জন্য সেখানকার কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি। প্রায় পাঁচ বছর সেখানে খবরের কাগজ বিক্রির পর সেখানে ইন্টার্ন হিসাবে যুক্ত হন তিনি। কাশ্মীরের বাসিন্দা বিলালের হাত ধরে ছবি তোলায় হাতেখড়ি মুন্নার।

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দামি ক্যামেরা সামলাতে পারবেন না বলে স্টুডিওতে ক্যামেরায় হাত দিতে দেওয়া হত না মুন্নাকে। কীভাবে ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়, তা মুন্নাকে প্রথম শেখান ওই স্টুডিওর কর্মী বিলাল। বিলালের সঙ্গে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে ছবিও তুলতে যেতেন মুন্না। বিলালের বিয়ের অনুষ্ঠানে ফোটোগ্রাফির দায়িত্বেও ছিলেন মুন্না।

ছবি তোলার প্রাথমিক বিষয় জানার পর নামী এক আলোকচিত্রীর সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু পাশাপাশি খবরের কাগজ বিক্রির কাজও চালিয়ে যান মুন্না।

অর্জুন রামপালের বাড়িতে খবরের কাগজ পৌঁছে দিতে যেতেন মুন্না। তখন অর্জুনের ফোটোশুট করার কথা মাথায় আসে তার। অভিনেতার বাড়ির এক ভুত্যের সঙ্গে ভাব জমিয়ে অর্জুনের বাড়িতে ঢুকে পড়েন মুন্না।

অর্জুনের ফোটোশুট করানোর পরেই বলিপাড়ায় ধীরে ধীরে যোগাযোগ তৈরি করতে শুরু করেন মুন্না। সালমান খান এবং সুনীল শেট্টির মতো বলি তারকারা তার ক্যারিয়ার তৈরিতে সাহায্য করেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সোনু সুডের যখন আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিল না তখন মুম্বইয়ের ওশিয়ারার একটি বাড়িতে সোনুর সঙ্গে থাকতেন মুন্না।

আলোকচিত্রী মুন্নার মতে, আমি বড়লোক হওয়ার আশায় মুম্বাইয়ে আসিনি। সংসার চালানোর মতো রোজগার করলেই হয়ে যেত। কিন্তু আমি কখনও কোনও কাজে আপত্তি জানাইনি। কোনও কাজ করতে ভয়ও পাই না আমি। আমার প্যাশন নিয়েই আমি এখন কাজ করি।

নয়া শতাব্দী/এসএম/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ