আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে এখনও মানুষ ওজন ও রং নিয়ে আলোচনা করেন। তবে কোন ঘরোয়া বা ব্যক্তিগত আলোচনায় নয়, অতিরিক্ত ওজন দেখিয়ে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি ব্রাজিলের স্থূলকায় মডেল জুলিয়ানা নেহেমকে। সম্প্রতি কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লেবাননের বৈরুত থেকে দোহা যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে যান জুলিয়ানা। আর সেখানে এ ঘটনা ঘটে। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে লেবাননে গিয়েছিলেন জুলিয়ানা। যাওয়ার সময়ে এয়ার ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ে কোনারকম সমস্যা হয়নি তার। কিন্তু দোহা হয়ে ব্রাজিলে ফেরার পথে বিমানে উঠতে গেলে তাকে উঠতে দেওয়া হয়নি।

৩৮ বছর বয়েসী মডেল জুলিয়ানা এ বিষয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেন— ‘আমার অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। বৈরুত থেকে দোহা যাওয়ার কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ছিল এটি।’

‘সেখানকার একজন কর্মী আমাকে বলেন, এই ফ্লাইটে উঠতে হলে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কাটতে হবে; না হলে উঠতে পারবেন না। আর ফার্স্ট ক্লাসের টিকিটের মূল্য ৩ হাজার মার্কিন ডলার। ফার্স্ট ক্লাসের আসন আকারে বড়; যা আমার সঙ্গে ফিট হবে। তা ছাড়া আমি যে ১ হাজার ডলার দিয়ে টিকিট কেটেছি, সে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। এত বড় কোম্পানির বৈষম্যমূলক এমন আচরণ খুবই লজ্জাজনক। আমি মোটা কিন্তু অন্য সবার মতো স্বাভাবিকা।’ বলেন জুলিয়ানা।

এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জুলিয়ানা এবং কোনো বাড়তি অর্থ না দিয়ে অন্য একটি ফ্লাইটে পরিবারসহ ব্রাজিলে ফিরেন এই মডেল।

জুলিয়ানা ব্রাজিলে ফিরে আদালতে মামলা করেন। গত ২০ ডিসেম্বর এ মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। বিচারক রেনাটা মার্টিনস বলেন— ‘মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জুলিয়ানা। এজন্য প্রতি সপ্তাহে ৭৮ ডলার ব্যয়ের থেরাপি প্রয়োজন। এই চিকিৎসাবাবদ কাতার এয়ারওয়েজ মোট ৩ হাজার ৭১৮ মার্কিন ডলার জুলিয়ানার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ব্রাজিলে ফিরে স্থানীয় মিডিয়াকে জুলিয়ানা বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে আমি তাদের কাছে মানুষ ছিলাম না। আমি একটি মোটা দানব ছিলাম, যে বোর্ডে উঠতে পারিনি। এটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ছিল। এমন কিছুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা কখনো কল্পনাও করিনি।’

এ ঘটনায় দারুণভাবে আহত হয়েছেন জুলিয়ানা। তা উল্লেখ করে এই মডেল বলেন— ‘আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। এজন্য নিজেকে দোষারোপ করেছি। অনেকবার আমি আমার মায়ের কাছেও ক্ষমা চেয়েছি। মাকে বলেছিলাম, আমার জন্য আপনি বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু মা আমাকে বার বার বলেছেন, এতে তোমার কোনো দোষ নেই।’

নয়া শতাব্দী/জেআই