ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কমেক ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে মরিয়া ‘অছাত্ররা’

প্রকাশনার সময়: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪৫

দীর্ঘ ছয় বছর পর অছাত্রদের দিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (কমেক) ছাত্রলীগের কমিটি হতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। দু’একদিনের মধ্যে সংগঠনটির মেডিকেল কলেজের কমিটি হতে পারে- এমনটা প্রচার পাওয়ার পর শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কমেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্যাম্পাসের নিয়মিত ছাত্রদের বাদ দিয়ে রহস্যজনক কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করা কর্মীদের নিয়ে কমিটি করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গঠনতন্ত্রমতে প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন কমেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অন্যথায় গঠনতন্ত্র যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি নিয়মিত ছাত্ররা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, প্রকৃত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে।

কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেওয়া তথ্য মতে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- ডা. এস এম শাহীন আলাম, ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা. তাজমীর রহমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. রবিউল আলম ও ডা. মো. নাঈমুল আবছার সানিয়াত। তারা ২০২২-২০২৩ সেশনে ইন্টার্ন শেষ করে ডাক্তারি সনদ নিয়ে ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। বর্তমানে ডা. এস এম শাহীন আলাম কক্সবাজার সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ডা. তাজমীর রহমান ও ডা. রবিউল আলম ইউনিয়ন হাসপাতাল এবং ডা. মো. নাঈমুল আবছার সানিয়াত জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন সভাপতি ডা. বোরহান উদ্দিন রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সিদ্দিক মো. আব্দুল্লাহ।

তারা বলেন, আমরা ২০২৩-২৪ সেশনের দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের আগে সভাপতি হিসেবে ডা. তাজমীর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. রবিউল আলম ও ডা. মো. নাঈমুল আবছার সানিয়াত ও শাহিন ভাইয়েরা দায়িত্ব পালন করেন। তারা ইন্টার্নশিপ শেষ করে ডাক্তারি সনদ নিয়ে ছাত্রজীবন শেষ করেছেন।

তথ্য মতে, মেয়াদউত্তীর্ণ ও দায়িত্বশীল নেতাদের ছাত্রত্ব বিলুপ্ত হওয়ায় ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে ২০১৮ সালে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। পরবর্তী অন্যান্য মেডিকেল কলেজের সাথে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগকে কেন্দ্রীয় কমিটির আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়-সভা করে পদপ্রত্যাশীদের সিভি সংগ্রহ করেন। তারপরও নতুন কোন কমিটি গঠন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ অবস্থায় যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে এই শাখা ছাত্রলীগের কমিটি- এমন গুঞ্জন উঠেছে; তবে কমিটিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে অনেক আগে। তারপরও কেন তাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাম্পাসে থাকা কর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদপ্রত্যাশী অনেকে জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতা রহস্যজনক কারণে অছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। এতে প্রকৃত ছাত্ররা যেমন ছাত্রলীগ বিমুখ হবে তেমনি ক্যাম্পাসে ভবিষ্যতে সংগঠনের নেতৃত্ব সংকটও দেখা দেবে। তাদের দাবি, ইন্টার্ন শেষ করা ছাত্রদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করা সম্ভব নয়, ফলে ছাত্রলীগকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে প্রকৃত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হোক।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এবং সর্বোপরি সবদিক থেকে যোগ্য কেউ নেতৃত্বে আসুক সেটাই চাই। সামনের মেডিকেল কমিটিতে যাতে ক্যাম্পাসে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিতে না পারে- তেমন সক্ষমতার কাউকে নীতিনির্ধারণীরা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে নিয়ে আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের স্থানীয় বা বাহিরের বিষয়টি বিবেচ্য হবে না বলে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি চর্চা করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যারা গ্রহণযোগ্য, মৌলবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এই ক্যাম্পাসকে আপোষহীন দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলবে তাদেরকেই নেতৃত্বে আনা হবে বলে আশাবাদী।’ তবে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এম এ আহাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কর্মীসভা শেষে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেছি। তখন হয়তো অনেকে ইন্টার্ন করতো। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় তাদের ছাত্রত্ব শেষ হতে পারে। কিন্তু আমরা যোগ্যদের নেতৃত্বে আনার সুপারিশ করেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমাদের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিবেন।’

অপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর শিকদার বলেন, ‘প্রদপ্রতাশীদের ছাত্রত্ব নিয়ে যে অভিযোগগুলো উঠেছে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে তুলে ধরা হবে।’

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। একজন ছাত্র লেখাপাড়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচ বহনের জন্য কাজ করতে পারেন। এটা দোষের কিছু না। কিন্তু ছাত্রত্ব শেষ হলে নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। যে অভিযোগ আসছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ