ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পড়াশোনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যবসা

প্রকাশনার সময়: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:১৭

ক্লাস শেষে আড্ডাতে মেতেছে বন্ধুরা। কেউ কেউ বিভিন্ন চত্বরে বসে কোথায় ঘুরতে যাবে সে পরিকল্পনা। কেউবা নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন বুনছে। কিন্তু সবার কি আর সময় হয় আড্ডা দেওয়ার। গল্প করার। ঘুরতে যাওয়া অন্যদের চেয়ে তারা তাদের দায়িত্বটা বোধ হয় বুঝে নিয়েছে একটু আগেই। নিজের পড়াশোনার খরচ যোগান দিতে হয়। পরিবারকেও সহযোগিতা করতে হয়। একারণেই অন্যদের মতো আড্ডা দেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় হয় না তাদের। বলছিলাম গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) অধ্যায়নরত মেহেদী, নুর, রনির কথা।

মেহেদী হাসান পড়াশোনা করেন বাংলা বিভাগে। সারাদিন ক্লাস শেষ হতে না হতেই বসেন দোকান নিয়ে। বিক্রি করেন বিভিন্ন প্রকার বার্গার, চিকেন ফ্রাইসহ বেশ মজার মজার সুস্বাদু খাবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউমার্কেটে তার দোকানটা বেশ পরিচিত।

এ সম্পর্কে মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টাইম হিসেবে এটা করতেছি। আর্থিক সমস্যাটাও দূর হলো। আমার ফাস্ট ফুড যারা খায়, তারাও যখন বলে ভালো হয়েছে; তখন নিজের কাছে একটা ভালোলাগা কাজ করে।

এক গুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ করে ভালো কিছু করতে হবে এই আশায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়েছিলেন বিপাকে, কি করবেন ভেবে পারছিলেন না। কারণ বাবা কৃষক, টাকা পয়সা দিতে পারছেন না।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পাচ্ছিলেন না কোনো টিউশনি। তাই ব্যতিক্রম উপায় বের করলেন বশেমুরবিপ্রবি কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী নুর আবছার। শুরু করলেন মেসে বসেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস আইটেম যেমন- হেডফোন,মোবাইল চার্জার, রাউটার বিক্রি। এ বিষয়ে নূর আবছার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভাবছিলাম কি করবো। এখানে একজন শিক্ষার্থী চলার জন্য মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগে। পরিবারের অবস্থা ভালো না, যার জন্য তারা খরচ দিতে পারে না। এসব কথা চিন্তা করেই শুরু করেছিলাম। প্রথমে তেমন কোনো অর্ডার পেতাম না, এখন মোটামুটি পায়।

মেধা শ্রম থাকলে সব কিছু সম্ভব তার প্রমাণ বশেমুরবিপ্রবি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রনি ঢালী। তিনি শুধু একজন উদ্যোগতা নয় বরং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। নিজের খরচ নিজে চালানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শুরু করেছিলেন 'শিক্ষার্থীর হাট' দোকান। যা এখন আরও কয়েকজনের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। 'শিক্ষার্থীর হাট' এ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোশাকসহ বিভিন্ন গল্পের বই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউমার্কেটে তার দোকানটি সবারই পরিচিত। উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রনি ঢালী বলেন, মূলত নিজে খরচ চালিয়ে নেওয়ার যে সামর্থতা সেটাই উদ্দেশ্য আমাদের। এটার মাধ্যমে আমাদের উদ্যোগতার সুযোগ রয়েছে। আমাদের অন্যরাও অনুপ্রেণিত হয়ে তারাও এটা করে তাদের নিজেদের খরচ চালাতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে সূলভ মূল্যে পছন্দ খাবার ও জিনিস কিনতে পারেন। এজন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মূলত মেহেদী, নুর, রনিদের প্রধান ক্রেতারা হলেন- এই শিক্ষার্থীরা, যারা কেউ তাদের বন্ধু ও সহপাঠী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এগুলো কেউ করলে সেটাতো ভালো। স্টুডেন্টদের সুবিধা হচ্ছে বিনিময়ে তাদেরও আর্থিক সমস্যাটা দূর হচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ