কুয়াশা ও মৃদু রোদের সকালে ভেসে আসে কিচিরমিচির শব্দ। লেকগুলো মুখরিত হয়ে থাকে পাখির জলকেলি এবং কলকাকলিতে। এভাবেই শীতের বার্তা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন ঘটে অতিথি পাখির। প্রতিবছরই নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে। এতে প্রকৃতি নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় তাদের আগমনে। সংস্কৃতি ও প্রকৃতির নগরীর লাল শাপলা শোভিত লেকগুলোয় কলকাকলিতে মুখরিত করে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি।
ক্যাম্পাসের গাছপালায় ঢাকা সবুজ প্রকৃতি আর পাখির খাদ্য ও বসবাস উপযোগী জলাশয়গুলোও যেন বরণ করে নেয় অতিথি পাখিদের। তাই শীতকালে তারা এই জলাশয় গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে। হিমালয়ের উত্তরের সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে এ সময়টায় প্রচুর তুষারপাত হয়। ওই তুষারপাতে পাখিরা মানিয়ে নিতে না পেরে বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দুরান্ত থেকে আসা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির দেখা মেলে। শীতের সময় ক্যাম্পাসে ১২৬ প্রজাতির দেশীয়, ৯৮ প্রজাতির বিদেশি মিলিয়ে ২০৬ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৭৮ প্রজাতির পাখি নিয়মিত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে। শীত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্যাম্পাসে বাড়তে থাকে অতিথি পাখির সংখ্যা। সাথে ভিড় বাড়ে দর্শনার্থীদেরও। পাখিদের বিচরণ দেখতে প্রায় প্রতিদিনই শতাধিক দর্শনার্থী এসে থাকে।ডিসেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির অর্ধেকটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এবার ট্রান্সপোর্টের পাশের কিংবা রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনের লেকে তাদের আধিক্য চোখে পড়ে। এছাড়াও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, মনপুরা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরের লেকগুলোতেও তাদের আধিক্য চোখে পড়ার মত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে ছোট সরালি, বড় সরালি, লেঞ্জা হাঁস, গারগেনি, রাইনেক, খঞ্জনা, টাইগা, শামুক খোল, জলপিপি, ডাহুক, জিরিয়া প্রভৃতি। পাখি আসার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের এস্টেট শাখার অধীনে জলাশয়গুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও অতিথি পাখির নিরাপদ আবাস ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে। লেকগুলো পরিষ্কার করা সহ সচেতনতার বার্তা নিয়ে ব্যানার, বিলবোর্ড টানানো হয়। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বাবুল বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে তুলনামূলক কম পাখি এবার এসেছে ক্যাম্পাসে। তবে পাখি আসার আগেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ লেকগুলো পরিষ্কার করার কাজ সেরে ফেলেছি যেন তাদের বিচরণে সমস্যা না হয়। এছাড়া পাখি নিয়ে সচেতনমূলক বার্তা ব্যানার, বিলবোর্ড ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, নভেম্বরের মাঝ থেকে এবার পাখি আসা শুরু করেছে লেকগুলোতে। তবে গত অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর কম সংখ্যক পাখি দেখা গিয়েছে। ট্রান্সপোর্ট এর পিছনে দর্শনার্থী, শিক্ষার্থীদের আড্ডার জন্য পাখিদের জন্য বেশ সমস্যা হয়ে থাকে৷ সচেতনমূলক ব্যানার টানানো হয়েছে এবারও। এবার পাখি মেলা কবে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, আমি একটু অসুস্থ থাকার বিভাগের সভাপতির কাছে পাখি মেলার আয়োজনের কথা জানিয়েছি। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে ২০০১ সাল থেকে পাখিমেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। প্রতিবছর জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারী মাসে পাখি মেলার আয়োজন করা হয়।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ