ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মুচলেকার পরও যৌন হয়রানির অভিযোগ 

প্রকাশনার সময়: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ২২:৩৫ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ২২:৩৮

যৌন হয়রানির অভিযোগে মুচলেকা দেওয়ার পর আবারও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরূদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) প্রক্টর বরাবর যৌন হয়রানির বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।

অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানকেও।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আল-আমিন। আবেদনপত্রে অভিযোগকারী বলেন, গত ১১ নভেম্বর মোহাম্মদ আল-আমিন আমাকে ফোন দিয়ে যৌন উদ্দেশ্যমূলক কথা বলেন। তার বিরুদ্ধে 'যৌন হয়রানিমূলক' সংবাদ প্রকাশে আমি খুশি হয়েছি মন্তব্য করে আমাকে ও আমার পরিবারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে আমাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, গত ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের একটি কোর্সে ইনকোর্সের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) অ্যাটাচমেন্ট প্রোগ্রামের সময় আল-আমিন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে স্পর্শ করে। তার এমন আচরণের প্রতিবাদ করায় তখনও সে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে এবং অন্যদের না বলতে হুমকি দেয়।

এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর ক্লাস চলাকালীন ক্লাসে মোবাইল রেখে ওয়াশরুমে গেলে আল-আমিন তার ব্যাগ থেকে মোবাইল নিয়ে বিভিন্ন রকমের চ্যাট ও কল লিস্ট মুছে ফেলে বলেও অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে । আমি চাই, এ বিষয়ে প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার করুক এবং আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

আল-আমিনের বিরুদ্ধে এর আগেও আরও একাধিক নারীকে হেনস্তা করার অভিযোগ আছে। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দশম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, সে অনেকের সাথেই এভাবে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে থাকে। আমার সাথেও একদিন কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেছিল। বিষয়টা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অন্তত ১০ জন সহপাঠীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আল-আমিন নিয়মিত এমন অপরাধ করে আসছে ৷ নিজের বিভাগের সিনিয়র, সহপাঠী জুনিয়র এমনকি অন্যান্য বিভাগের অন্তত ডজনখানেক মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন আগেও বিষয়টি গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অভিযোগ সত্যি হলে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

এবিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার এই ধরনের অপরাধ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১০ ধারা, দণ্ডবিধির ৫০৬ ও ৫০৯ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৫ ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ। যার জন্য ১০ বছর জেল হতে পারে এবং এটি একইসঙ্গে জামিন অযোগ্য অপরাধ, এতে সর্বনিম্ন ৬ মাস জেলে থাকতে হবে না হলে জামিন হবে না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আল-আমিন বলেন, আমি কাউকে হুমকি দিইনি। এটা মিথ্যা-বানোয়ায়াট। আমি নিশ্চিত একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর(ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমাদের কাছে একটা মেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি বসেছি বিষয়টি নিয়ে। আমরা আগামী দিন অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল বরাবর ফরোয়ার্ড করে দিব।

একই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বারবার একই ধরনের অভিযোগ আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিবে- তা জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

উল্লেখ্য, এরআগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত আল-আমিনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল’ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় অন্য একজন শিক্ষার্থী। সেসময় অভিযুক্ত আল-আমিন যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের কাছে মুচলেকা দেয় বলে জানায় সেলের সদস্য সচিব ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন রেজোয়ানা।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ