বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) দুই শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে বহিষ্কারের অভিযোগ উঠেছে। বহিষ্কারকৃত আবদুল্লাহ মোল্লা এবং এম সাদিদ আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে দাবি করে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই শিক্ষার্থী প্রায় একই পোস্ট প্রদান করেন। (Amn Abdullah) আইডি থেকে আবদুল্লাহ মোল্লা লিখেন ‘সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অন্যায়ের বিচার চাই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার ৬ মাস পর রেজাল্ট পাবলিশ হলে আমি দেখি আমাকে ফেল করানো হয়েছে। যোগাযোগ করলে বলা হয় আমার খাতা শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, এক্সামে যোগসাজশ করে লেখা। কিন্তু এক্সাম হলে এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। রেজাল্ট পাবলিশের প্রায় এক মাস পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জানতে পারি আমাকে ২ সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার ৭ মাস পরে বহিস্কৃত হই।
ব্যক্তিগত আক্রোশে বহিষ্কার হয়েছেন এমন দাবি করে ওই শিক্ষার্থী আরও লিখেন ‘যেহেতু আমার মাস্টার্স-এর লাস্ট সেমিস্টার ছিল, তাই দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা যৌক্তিক নয় বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তার সুপারিশে নাকি এক সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে, পরে আমি এক সেমিস্টার বহিষ্কারের নোটিশ পাই। ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয়, তুমি দোষ স্বীকার করে নাও, তোমাকে আমরা ক্ষমা করব। কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল আমি কি দোষ করেছি যে আমি দোষ স্বীকার করব? পরীক্ষা হলে আমি কোনো অসাধুপায় গ্রহণ করিনি তাহলে যোগসাজশ বিষয়টা কি আমি বুঝিনা। আমার উপর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার পরীক্ষা সমাপ্ত ৭ মাস পরে মিথ্যা অভিযোগে আইন বহির্ভূতভাবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি বিচার চাই এবং আমি চাই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার যেন আর কোনো শিক্ষার্থী না হয়।
এদিকে বহিষ্কার সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা যায়, আইন বিভাগের সভাপতি মানসুরা খানম সাক্ষরিত একটি চিঠি বিগত ২৯ আগস্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর প্রেরণ করা হয়, যেখানে একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে দুই শিক্ষার্থীর খাতা বাতিলের সুপারিশ করা হয়। চিঠিতে লেখা হয়, ‘বিগত ২৪ আগস্ট আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় এলএলএম-এর শিক্ষার্থী এম সাদিদ এবং আব্দল্লাহ মোল্লা, এলএলএম ২য় সেমিস্টার পরীক্ষার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০, পরীক্ষা ২০২০) কোর্স নং- LAW521, LAW523, LAW525, LAW527, LAW529 হুবহু মিল পাওয়ায় উল্লেখিত কোর্সসমূহের খাতাগুলো বাতিলের সুপারিশ এবং শৃঙ্খলা বোর্ডে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে ২০ সেপ্টেম্বর উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল হোসেন সাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। চিঠিতে লেখা হয়, ‘অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০ (২য় সেমিস্টার) পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গত ২৯/০৮/২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত কোর্স নং LAW521, LAW523, LAW525 LAW527, LAW529 পরীক্ষায় আপনি অসদুপায় অবলম্বন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে চলতি সেমিস্টার (জুলাই ডিসেম্বর-২০২০) বহিষ্কার করা হলো।’
এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি মানসুরা খানম বলেন, ‘তাদের খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই তাদের খাতাগুলোতে হুবহু মিল রয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতে আমাদের মনে হয়েছে তারা পরীক্ষায় অনৈতিক উপায় অবলম্বন করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, তাদের সিট পাশাপাশি ছিল। পরবর্তীতে আমরা একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের খাতা বাতিলের সুপারিশ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে চিঠি প্রদান করি এবং শৃঙ্খলা কমিটি তাদের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার বহিষ্কার করে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রয়োগের যে দাবি করা হচ্ছে- এমন কোনো বিষয় এখানে ঘটেনি। মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফলাফলের কিছুদিন পূর্বেই মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তাদের উভয়েরই ফলাফল রয়েছে। এই সেমিস্টারে তাদের খাতা বাতিল করা হয়েছে সুস্পষ্ট কারণের ভিত্তিতে। কারণ, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করেই সার্টিফিকেট অর্জন করুক, পরীক্ষায় কোনোধরনের অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে নয়।’
এ বিষয়ে সাক্ষরকারী উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বহিষ্কার প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষায় কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলে সেই সংক্রান্ত চিঠিগুলো শিক্ষকরা আমাদের নিকট প্রেরণ করেন এবং এর আলোকে উপাচার্য স্যারের সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়েই শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই দুই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও একইভাবে দুই সেমিস্টারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে আমি কাগজপত্র মিলিয়ে দেখি তারা মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে আমি আইন অনুষদের ডিনের সঙ্গে প্রথমে কথা বলি এবং পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে এক সেমিস্টারের বহিষ্কার নোটিশ দেই।’
সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো শিক্ষক প্রভাবিত করেছিলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এস.এম গোলাম হায়দার বলেন, ‘প্রভাবিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানেতো বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন, সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এছাড়া, মিটিংয়ের সভাপতি ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর স্যার। তাই এখানেতো কারো প্রভাব বিস্তারের সুযোগই নেই।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ