ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাবলম্বী হতে চান বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তাসলিমা

প্রকাশনার সময়: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:১৮

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের যোগ্যতায় স্বাবলম্বী হতে চান তাসলিমা। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তার জন্য সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে বাদ পড়তে হচ্ছে তাকে।

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তাসলিমা আক্তার লিমা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেছেন। ডিগ্রির পাশাপশি অর্জন করেছেন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেলসহ কম্পিউটারের বিভিন্ন দক্ষতা। তবুও মিলছে না কোনো চাকরি।

তিনবোন ও একভাইয়ের পরিবারে তাসলিমা দ্বিতীয়। বাবা মো. ইদ্রিস ভূঁইয়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা মোছা. মাফিয়া আক্তার একজন গৃহিণী। বাকৃবি ক্যাম্পাস এলাকায় থাকেন তারা।

তাসলিমা ২০১৩ সালে এসএসসি, ২০১৫ সালে এইচএসসি এবং ২০২১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাকৃবির বিভিন্ন অনুষদের অফিস সহকারী পদে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাবল্যাবে অ্যাটেনডেন্ট পদে, কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাবরেটরির বেয়ারার পদসহ অন্যান্য পদে চাকরির আবেদন করলেও তার কপালে জুটেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদন করার পর তা মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্তই থেমে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরির বেয়ারার পদে মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন তাসলিমা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও প্রতিবন্ধী কোটা থাকা সত্ত্বেও ওই পদে চাকরি পাননি তিনি। এছাড়াও ২০২০ সালের ১৮ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাবল্যাবের অ্যাটেনডেন্ট পদে আবেদন করেন। একইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের পদেও আবেদন করেন তাসলিমা। পরে সেগুলোতেও কোনো সাড়া পাননি।

তাসলিমার বাবা ইদ্রিস ভূঁইয়া বলেন, ২০১৮ সালে অবসরের পর থেকে অস্বচ্ছ্লতায় দিন কাটছে আমার পরিবারের। পরিবারে ছেলেটি সর্বকনিষ্ঠ। বর্তমানে পরিবারে নেই কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অবসরপ্রাপ্ত হওয়ায় পরিবারে কর্মক্ষম বলতে একমাত্র তাসলিমাই আছে। কিন্তু যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেয়েটি কোনো চাকরির দেখা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক কর্মচারী হিসেবে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আবেদন যোগ্যতা সাপেক্ষে আমার মেয়েকে যেনো একটি চাকরির সুযোগ করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের সাথে মানানসই এরকম আলাদা চাকরির অনেক সেক্টর আছে। তার যেহেতু প্রতিবন্ধী কোটা আছে পাশাপাশি যোগ্যতাও আছে, অবশ্যই সে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। তবে যেসব পদে চাকরি করলে প্রতিবন্ধী হিসেবে তার সাথে মানানসই হবে, ওই পদগুলোতে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই সেটি বিবেচনায় নেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কিছু পদে চাকরির জন্য করোনার আগে অনেক আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। প্রতিবন্ধী ওই মেয়েটিও সেগুলোতে আবেদন করেছিল বলে শুনেছি। যতদূর জানি করোনার কারণে দুই বছর ধরে ওই আবেদনপত্রগুলো আর যাচাই-বাছাই করা হয়নি। আমি রুটিন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান স্যার ছুটিতে আছেন। উনি আসলে বিষয়টি হয়ত বিবেচনায় নেবেন।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ