ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
বাকৃবি ঈশা খাঁ হল

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৫৬

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক ঈশা খাঁ হলের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার, ম্যানেজার ও সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ছাত্র হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকি, মাদক পাচার ও মাদকসেবনের মতো অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এসব বিষয় উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগপত্রে হলের শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঈশা খাঁ হলে সংস্কার কাজ চলমান থাকলেও কার্যকরি কেনো উন্নয়ন চোখে পড়েনি। উন্নয়নের নামে হলে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার, অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুদিন পরেই সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় অনেক আগেই হল প্রশাসনকে জানানো হয় এবং হল প্রশাসনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখায় লিখিতভাবে অবহিত করেন। এসব বিষয় ঠিকাদারের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারকে জানানো হলে তারা আমাদের সাথে অসদাচরণ করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়।

গত বুধবারের (২১ সেপ্টেম্বর) ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওইদিন দুপুরে ঈশা খাঁ হলের পশ্চিম ভবনের ২১৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র রেজোয়ানের রুমের সিলিং ফ্যান খুলে মেঝেতে পড়ে গেলে সেটি প্রথমে হল অফিসে জানানো হয়। হল অফিস থেকে ঠিকাদারের ম্যানেজার মো. রাকিবকে ফোন করা হয়। কথোপকথনের সময় ঠিকাদারের ম্যানেজার হলের সেকশন অফিসার মো. লিয়াকত আলীর সাথে অসদাচরণ করেন। পরে ছাত্ররা ম্যানেজার রাকিবের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পরে হলের ছাত্রদেরকে বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে কমিশনার ফারুক নাম ব্যবহার করে এক ব্যক্তি মুঠোফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে।

ওই হলের আবাসিক ছাত্রদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সংস্কার কাজের বাজেট প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার মতো। অথচ সংস্কার কাজ করেছে অত্যন্ত নিম্নমানের। ওয়াশরুম ও টয়লেটের পাশের কক্ষের দেয়ালগুলোতে পানি চুঁয়ে পড়ে ভিজে যাচ্ছে এবং রং উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও ওয়াশরুম ও টয়লেটগুলোতে নিম্নমানের টাইলস, পানির কল, কমোড ও দরজা ব্যবহার, ফ্ল্যাশ কাজ না করা ও কমোডে পানি আটকে থাকার মতো অনেক ত্রুটি রয়েছে। এছাড়াও সংস্কার কাজে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। হলের ইলেকট্রিকের কাজে নিম্নমানের তার, সুইচ, বোর্ড, রেগুলেটর লাগানো হয়েছে। সংস্কারের কিছুদিন পরেই বেশিরভাগ কক্ষগুলোতে সুইচ বোর্ড ও প্লাগ পয়েন্ট নষ্ট পাওয়া গেছে। হলের ছাদ সংস্কারে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও বর্তমানে বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ছে। রং প্রলেপ দেওয়ার কিছুদিন পরেই গোসলখানা ও টয়লেটের রং চটা ধরে ওঠা শুরু করেছে। এছাড়াও কাজ চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্রদের লকারে রাখা অনেক জিনিসপত্র পরে এসে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওই হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি হাসান অপু ও মসিউর রহমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারের ম্যানেজার রাকিব ও অপু সবসময় নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকে এবং ছাত্রদের সাথে খারাপ আচরণ করে। ছাত্ররা বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলতে গেলে তাদেরকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের অস্থায়ী আবাসন টিনশেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে নেশার উপকরণ হাতে নাতে উদ্ধার করে। রাকিব কাজের ফাঁকে পুরাতন স্টিলের পাইপ ও অন্যান্য পুরাতন উপকরণ আত্মসাৎ করে।

এদিকে ঠিকাদারের অস্থায়ী আবাসনে ভাঙচুরের ঘটনার দিন ওই টিনশেড কক্ষগুলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণের জন্যে হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখা বরাবর আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদারের ম্যানেজার মো. রাকিব বলেন, ঘটনার দিন আমাকে ফোন করা হলে আমি হলের সেকশন অফিসার কিংবা ছাত্র কারো সাথে খারাপ আচরণ ও গালিগালাজ করিনি। উল্টো ওই হলের ছাত্ররা আমাকে খারাপভাবে গালিগালাজ করেছে। আমার কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। আমি দিতে যাইনি। একারণে তারা আমাদের টেনশেডে ভাঙচুর করেছে। আমরা কাউকে হত্যার হুমকি-ধামকি দেইনি।

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকদিন আগে সংস্কার করার কারণে কিছু জিনিসে হয়ত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তবে এ বিষয়টি ছাত্ররা যদি হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ করত, তাহলে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। এজন্য হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের আবাসনে ভাঙচুর করতে পারে না।

মাদক পাচার ও সেবনের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারের ওই ম্যানেজার বলেন, আমরা এখানে কাজের জন্য এসেছি। মাদক পাচার ও সেবন করলে আমরা কাজ করতে পারতাম না। বরং ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরাই মাদকের সাথে জড়িত। ওরাই আমাদের কাছে বারবার মাদক কেনার জন্য টাকা চায়।

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার মো. নবাবকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহীন ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মান পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। ঈশা খাঁ হলে কাজের যে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে পর্যবেক্ষণ কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ঠিকাদারের মাধ্যমে হলের কাজ সঠিকভাবে করিয়ে নেওয়া হবে। হলের কাজ ঠিকমতো বুঝিয়ে না দিলে আমরা বিল পরিশোধ করব না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মহির উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা লাভের অধিকার আছে। ঠিকাদারের ম্যানেজার মো. রাকিব আমাদের শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছে, এমন একটি অভিযোগপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। অভিযোগটি খতিয়ে দেখে আমরা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। হলের কাজের যে সমস্যাগুলো চোখে পড়েছে, তা দ্রুত সংস্কার করে দেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ