শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দেয়া ‘প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও কেড়ে নেয়া কর্মসংস্থান (ক্যাফেটেরিয়া) ফিরিয়ে দেয়া’ এ তিন দফা দাবি নিয়ে পথে নেমেছেন ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার শিকার হয়ে আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। এর পর টানা ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের সাড়া মেলেনি। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সাথে ‘রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সজল কুন্ডু বলেন, ‘প্রশাসন আমার সাথে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো তো বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। আমার চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হইছে, আমার রুটিরোজির মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হইছে। আমাকে শারীরিক-মানসিক-অর্থনৈতিকভাবে যতভাবে নিষ্পেষণ চালানো যায় তার সব ব্যবস্থাই তারা (প্রশাসন) করছে। যা হচ্ছে তা আসলেই অন্যায় হচ্ছে। আমি চাই আমার সাথে এ অন্যায়গুলো করা বন্ধ হোক। আমি এই জিনিসগুলো থেকে মুক্তি চাই।’
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালালে আন্দোলনের অংশ না হয়েও এতে গুরুতর হয়ে আইসিইউতে ভর্তি থাকতে হয় সজল কুন্ডুকে। এরপর উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চিকিৎসার ব্যয় বহনের কথা থাকলেও তা না করে প্রশাসন উল্টো তার কাছ থেকে ‘রুটিরোজির একমাত্র স্থান’ আইআইসিটির ক্যাফেটেরিয়া কেড়ে নিয়েছে বলে দাবি করেন সজল।
গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে চলে গেলে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সজল কুন্ডুকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও ৯ম গ্রেডে চাকরি প্রদানের দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত চিকিৎসা পেলেও আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও চাকরি প্রদানের দাবি পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন তো দূরের কথা বরং শিক্ষার্থীদের দাবির অংশ ও আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের কারণে রুটিরুজির একমাত্র স্থান ক্যাফেটেরিয়া কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান সজল কুন্ডু। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করায় যেকোনো সময়ে সে মামলায় নিজে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সজল। তিনি বলেন, আট মাস পেরিয়ে গেল- সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর দায়ের করা মামলা তুলে নেয়া হবে বলে আমাদেরকে আশ্বস্থ করা হয়েছিল। এখনো এগুলো তুলে নেয়া হয় নাই। এখন পর্যন্ত যে মামলা তুলে নেয়া হয় নাই সে মামলায় আমি যে ফেঁসে যাব না তার নিশ্চয়তা কী? আমি মাইর খাইলাম, ক্যাফেটেরিয়া হারাইলাম এখন আবার মামলায় ফেঁসে যাই কি না তা নিয়ে ভয় কাজ করছে।
১১ দিনের অবস্থান কার্যক্রম অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সজলের সাথে যোগাযোগ না করলেও উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ১৬ই জানুয়ারির হামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সজল কুন্ডুকে অন্তত ৯ম গ্রেডের একটি চাকরি এবং নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়ার স্পষ্ট আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সজল এখনো শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি (সজল) যে ক্যাফেটেরিয়াটি চালাতেন সেটিও কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার একমাত্র কর্মসংস্থান কেড়ে নেয়ায় এমনিতেই স্প্লিন্টার ও বোমার মারাত্মক ক্ষত নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও হিমশিম খাওয়া সজলের সামনে নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে চরম অর্থ সংকট। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম কিছুদিন সরকারি তত্ত্বাবধানে সজলের নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হলেও গত তিনমাস ধরে তাও বন্ধ। বারবার এ ব্যাপারে অবহিত করার পরও সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তরফ থেকেই আর সজলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সজল একাই উদ্যোগী হয়ে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের নামে করা হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়িত করতে হবে, অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে হবে- এ তিন দফা দাবিতে গত ১১ দিন যাবত ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াচ্ছে। আমরা শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সজলের দাবিগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ