অবিভক্ত বাংলার ১ম প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজটি যেন চরম অবহেলার শিকার। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠালগ্নে কলেজটির নাম ছিল কায়েদ-ই-আজম কলেজ যা পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ নামে। কলেজটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা নলগোলার ভায়োলরাজ এস্টেটের জমির ভবনে যা পরবর্তীতে লক্ষী বাজারে স্থানান্তর করা হয় এবং পূর্বের ক্যাম্পাসটিকে ছাত্রাবাসে রুপান্তর করা হয় যা আজো প্রভাবশালীদের দখলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০০ হাজার। কিন্তু এতো পরিমাণে শিক্ষার্থী থাকলেও কলেজটিতে নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় আশপাশের মেস বা সাবলেট রুমে।
তারই মধ্যে একজন সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স শেষ করা এ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গোলাম মোস্তফা নাসিম। বর্তমানে কলেজের পাশে পাঁচ তলা বাড়ির একটি মেসে থাকেন। জীবন কেমন কাটছে- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন কতটা কষ্টে আছি। বাসার নির্মাণ কাজ চলার কারণে সকাল থেকে গ্যাস, পানি কিছুই নেই, সকাল থেকে না খেয়ে এখন বাজার থেকে সিলেন্ডার কিনে এনেছি। রান্না করবো তারপর খাবো। হল না থাকায় আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। নিদিষ্ট সময়ে বাসায় ফেরা, কাজের লোক সংকট পেলেও বিভিন্ন সময়ে না আশা, সহ ইত্যাদি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি হচ্ছে পড়াশোনা করার মতো পরিবেশ। মেসের মধ্যে পড়াশোনা করার মতো ভালো কোনো পরিবেশ নেই। এখানে একটি নিদিষ্ট নিয়ম কানুনের মধ্যে চলতে হয়। অতিরিক্ত সময় লেখাপড়া করার সুযোগ থাকে না। রাতে নিদিষ্ট সময় লাইট অফ করে দেয়া হয়। এর পর চাইলেও কেউ পড়াশোনা করতে পারে না। কিন্তু হল থাকলে সেখানে রিডিং রুম থাকতো, শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ পড়াশোনার সুযোগ পেতো। আর হল না থাকায়, সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে কলেজের ছাত্রীদের। তাদের কষ্ট আরো বেশি। ঢাকা শহরে মেয়েদের ম্যাস খুবই কম আর থাকলেও রয়েছে না বাধ্যবাধকতা। তাও আমি একটা মেসের মধ্যে আছি অনেকে তাও পাচ্ছে না, তাদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হচ্ছে।’
এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমি জানি আমাদের পূর্বের একটি ক্যাম্পাস রয়েছে যেটিতে একসময় ছাত্রাবাস ছিল, কিন্তু বর্তমানে একটি প্রভাবশালী মহল ক্যাম্পাস সহ জায়গাটি দখল করে রেখেছে। এছাড়াও নাকি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আমাদের কয়কটি হল এবং জায়গায় রয়েছে। এগুলো উদ্ধার করতে পারলে হয়তো আমাদের কলেজে কোনো সমস্যা থাকতো না। জানি না আমাদের এই সমস্যার শেষ কোথায়? সরকার যদি আমাদের জন্য কিছু না করে তাহলে আমাদের কষ্ট লাগব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রী জানান, ‘আমাদের কলেজে নেই কোন হলের ব্যবস্থা। এই নিয়ে নানান ভোগান্তিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ছাত্রীদের। আবাসিক এই সমস্যার সমাধান কবে মিলবে তা আদতে কেউ জানেন না। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ আসে গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। যেমন আমার গ্রামের বাড়িই কিশোরগঞ্জে। বাবা পেশায় কৃষক, আমিই পরিবারের বড় সন্তান। কলেজের ভর্তি হওয়ার পর আশেপাশের এলাকায় মেস বা বাসা বাড়া করে শুধু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হই খণ্ডকালীন কল সেন্টারের চাকরিতে (পার্টটাইম জব) যোগ দিতে। এই জন্যে আমি পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি না, যার প্রভাব পড়ে ফলাফলে। দিনে দিনে এই আবাসন সমস্যা ও তাদের নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি তা হচ্ছে মেসের ভাড়া দিয়ে থাকার মতো অনেক শিক্ষার্থীর সামর্থ না থাকায় বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ