ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর, যার অবস্থান পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল কায়েদ-ই-আজম কলেজ। নাম পরিবর্তন করে পরবর্তীতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ নামকরন করা হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ একটি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের হতাশার বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরেও তারা একটি নিজস্ব পরিবহন পেলো না।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরকারি সাত কলেজের ছয়টি ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস থাকলেও একমাত্র সোহরাওয়ার্দী কলেজে যাতায়াতের জন্য কোন বাস নাই। সোহরাওয়ার্দী কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সব মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
সাত কলেজের বাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিতুমীর কলেজে ০৯ টি, ঢাকা কলেজে ০৮ টি, যথাক্রমে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজ ০৪ টি, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ০২ টি এবং বাঙলা কলেজে ০১ টি বাস রয়েছে।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজে বাস না থাকায় যাতায়াতের জন্য চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
দুর্ভোগের শিকার জোবাইদা আমান লিজা বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে আসি। সকালে আমি বাসা থেকে অটোরিকশা করে নদীর ঘাট পর্যন্ত যাই। তারপর নদী পার হই। সেখান থেকে একটা বাসে করে নতুন বাজার যাই। পরে নতুন বাজার থেকে বাসে করে সদরঘাট যাই। আবার সেখান থেকে হেঁটে কলেজ পর্যন্ত আসি।
তিনি আরও বলেন, আমার যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়, আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ব্যায় হয়। ক্লাস করার জন্য সকাল ৬ টায় বের হই এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত ৮ টা বেজে যায়।
গাজীপুর থেকে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে আমাদের কলেজ সব দিক থেকে অবহেলিত। বাকি ছয়টি কলেজের বাস থাকলেও আমাদের কলেজে নাই। বাস না থাকায় প্রতিদিন ক্লাস করতে পারি না। একদিন ক্লাস করতে আসলে বাসায় ফিরে খুবই ক্লান্ত হয়ে যাই। যানজটের কারণে আসা-যাওয়ায় অনেক সময় লেগে যায়।
সাভার থেকে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থী ফিওনা এষা সরকার বলেন, বাসওয়ালারা হাফ ভাড়া নিতে চায় না, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখানো হলেও দুর্ব্যবহার করে। মেয়ে শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে বাসে নিতেও আপত্তি করে। অনেক সময় ঠিক জায়গায় নামাতেও ঝামেলা করে। এভাবেই প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লেগে যায়।
ক্যাম্পাসের আরো অনেক স্টুডেন্টদের যাতায়াতের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাদের থেকে জানা যায়, অনেকেই উত্তরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর থেকে যাতায়েত করি। ক্যাম্পাসের নিজস্ব বাস না থাকায় রাস্তায় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে রাস্তায় যানজটের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়, অনেকে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। আবার অনেকের পরীক্ষা কিংবা ল্যাব ক্লাসে আসতেও দেরি হয়ে যায়। কেউ কেউ সকাল ৯ টার ক্লাস ধরার জন্য সকাল ৬ টায় বাসা থেকে বের হয়েও যখন পৌঁছে, তখন দেখা যায় ক্লাস প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে হাফ ভাড়া নিয়ে বাস হেলপারদের সাথে তর্ক-বির্তকে জড়াতে হয়। কখনো অপমান, লাঞ্ছনার শিকারও হতে হয়।
এই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোহসিন কবির কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটা কলেজেই কি বাস আছে? অবশ্যই বাস নাই। আর আমাদের সকল সমস্যার মূল হচ্ছে জায়গার সংকট। ক্যাম্পাসে যদি ২ টি বাস আনা হয় তাহলে দু'জন চালক, দু'জন হেল্পপার লাগবে। গাড়ি রাখার জন্য একটা গ্যারেজ তৈরি করতে হবে। কিন্তু এখানে গ্যারেজ তৈরি করার মতো কোন জায়গা নাই।
পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে বাস আনলে হয়তো ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর যাতায়াত কাভার হবে, কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশ কি ভাবে কাভার হবে? ২ টি বাস আপনি কোন রুট রেখে কোন রুটে চলাচল করাবেন? বাস আনলে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা দেওয়া লাগবে। অনেকেই ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেসে থাকে তারা বলবে আমরা তো বাসে চড়ি না, তাহলে আমরা কেন চাঁদা দিব। এসব দিকও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আর আমাদের আগে জায়গার সংকট নিরসন করতে হবে। এই জায়গার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কোনকিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ