ক্যান্টিনে খাবার খেয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ এবং ক্যান্টিন মালিকেকে মারধরের বিষয়কে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে আছে ঢাকা কলেজের প্রধান ক্যান্টিন। এতে বিপাকে পড়েছেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কলেজের প্রধান ক্যান্টিনে খাবার খেয়ে টাকা না দেওয়া ও টাকা চাওয়ায় ক্যান্টিনের মালিককে ধরে নিয়ে মারধর করে নথ ব্লকের ছাত্রলীগ কর্মী ও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমিনুর রহমানের অনুসারী শাহরিয়ার হাসান জিওন। এসময় সাউথ ব্লকের ছাত্রলীগের কর্মীরা এসে জিওনের হাত থেকে ক্যান্টিন মালিককে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কলেজ ক্যান্টিনে ওইদিনই তালা ঝুঁলিয়ে দেয় জিওন ও তার অনুসারীরা। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে ঢাকা কলেজের ক্যান্টিন। এতে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নাইমুর রহমান বলেন, আমাদের আনার্সের ক্লাসগুলো বেশিরভাগ সময় দুপুরে শেষ হয়। বাহির থেকে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে খাবারের দাম কিছুটা কম থাকার কারণে দুপুরের খাবারটা ক্যান্টিনেই খাওয়া হতো। এখন ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার কারণে বাহির থেকে খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় বেশিরভাগ সময় না খেয়েই থাকতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের খাবারের মান ভালো না হওয়ায় অনেক সময় ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করতাম। এখন ক্যান্টিন বন্ধ থাকার কারণে সেই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মারামারির কারণে ক্যান্টিন বন্ধ রয়েছে। আমরা এই বিষয়টিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে এ সম্পর্কে আমাদেরকে রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর আমরা ক্যান্টিন খোলার বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব। এর আগ পর্যন্ত ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে।
আর সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারামারি তেমন কিছু হয়নি। আর আমাদের কাছে অফিশিয়ালি কেউ আসেনি। ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে ঝামেলার কথা শুনেছি। একপক্ষ ক্যান্টিনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর একটা ছেলে বাইরে আহত হয়েছে। এটা নিয়ে দুই গ্রুপ মুখোমুখি হয়েছে। তবে বিষয়টি বেশি বড় হওয়ার আগেই আমরা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি।
এর আগে গত গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ক্যান্টিনের ম্যানেজার আক্তার হোসেনকে মারধরের ঘটনায় রাত ১০ টার দিকে নিউইমার্কেট এলাকার বিশ্বাস বিল্ডারর্সের সামনে দক্ষিণ-দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতা সাদা কাউসারের অনুসারীরা উত্তর ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ কর্মী জিওনকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। পরে তারা কলেজের মূল গেট দিয়ে হলে প্রবেশ করে। এরপরই উত্তর পাশের পাঁচটি হলের সাথে দক্ষিণ হলের ২ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলতে থাকে। পরে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ থেমে যায়।
এর সূত্র ধরেই গত শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দক্ষিণ হলের ছাত্রলীগ কর্মী আলামিনকে একা পেয়ে নর্থ হলের ২০-৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মী ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পাশে তাকে মারধর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দক্ষিণ ব্লকের ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠি, রামদা, হাতুড়ি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সে সময় উত্তর ব্লকের ছাত্রলীগ কর্মীরাও বেরিয়ে পড়েন এবং আগ্নেয় অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এতে বেসরকারি টিভি সাংবাদিক ফরহাদ বিন নুরসহ দুপক্ষের ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
পরে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে শিক্ষক প্রতিনিধি, ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যস্ততায় সংঘর্ষ বন্ধ হয়। এ নিয়ে এখনো কলেজে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভীতিকর পরিবেশে দিন যাপন করছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ