ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছেলে খুন হয়েছে সেখানে আমি কীভাবে যাই?

প্রকাশনার সময়: ০১ আগস্ট ২০২২, ১৬:২৫ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২২, ১৬:২৭

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছেলে খুন হয়েছে সেখানে আমি কীভাবে যাই? আমাকে অনেকেই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা করতে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমার ছেলের রক্ত লেগে আছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যার বিষয়ে কথা বলতে গেলে মা ফাতেমা আক্তার এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে দৈনিক নয়া শতাব্দীর সাথে কথা বলেন।

জানা যায়, ২০১৬ সালে আগস্টের প্রথম প্রহরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয় খালিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মতো একটি তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। খালিদ মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়।

বর্তমানে খালিদ হত্যার অর্ধযুগ পেরোলেও হয়নি বিচার। যার জন্য তদন্তের ধীর গতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগের অসহযোগীতাকে দায়ী করছেন খালিদের পরিবার।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হত্যার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই পুলিশ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রুপম চন্দ্র দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম, লোক প্রশাসব বিভাগের আবু বকর ছিদ্দিক, বিবিএর সুদীপ্ত নাথ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সজন বরণ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। ঘটনার তিন দিন পর প্রধান আসামি মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব চন্দ্র দাসকেও গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে বিপ্লব হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে বর্তমানে সে এবং বাকি আসামিরা জামিনে মুক্ত।

খালিদ হত্যার বিচারের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে খালিদের মা নয়া শতাব্দীকে বলেন, বারবার তদন্ত সংস্থার পরিবর্তন এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা এর জন্য অন্যতম দায়ী। তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যার সাথে জড়িত আসল দোষীদের বারবার বাদ দিয়ে আসছে। আমরাও তাদের প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজি দিয়েছি। এভাবেই ৬ বছর শেষ হয়ে গেছে। সবশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরে আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বললেও তিনি ২ বছরেও প্রতিবেদন জমা দেননি। এরমধ্যে তিনি পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে পিবিআই কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আলম মাহফুজের উপর নতুন দায়িত্ব পড়েছে। দেখা যাক তিনি কী করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কিংবা ছাত্রলীগ থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার সময়কার ভিসি আলী আশরাফ স্যার তো আমার ছেলের জানাজায়ও আসেন নাই। আমাদের সাথে কথা বলাতো দূরে থাক। তারপর এমরান কবির স্যার আসলে আমরা ওনার সাথে নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

ছাত্রলীগের বিষয়ে তিনি বলেন, এতদিন ছাত্রলীগের বিষয়ে কাউকেই কিছু বলতাম না। কিন্তু এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ ছাত্রলীগ করার কারণে আমার ছেলে ছাত্রলীগের হাতেই খুন হয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে এত বছরে একবারও সহযোগিতা করে নাই। বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস, তৎকালীন সভাপতি আলিফসহ ওই সময়কার সবাই আমার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী।

অভিযুক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, উনি আমার নাম কেন বলেছেন জানি না। তবে মা তো মা ই। উনি অভিমান করে আমার নাম বলতে পারে কারণ যারা আসল অভিযুক্ত তারা অনেক প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে আমি চাইলেও কিছু করতে পারবো না।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আলম মাহফুজ বলেন, এক মাস আগে এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। ডিবি, সিআইডি পিবিআই তদন্ত করার পর ফের পিবিআই তদন্ত করছে। বর্তমানে কিছু আসামির নাম যুক্ত করতে যে নারাজি দেয়া হয়েছে তার তদন্ত চলছে। কবে নাগাদ আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না।

খালিদ হত্যার বিষয়ে বর্তমান প্রশাসনের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, এটাতো অনেক আগের ঘটনা। এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তারপরও আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দেখবো কি করা যেতে পারে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ