শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বুলবুল আহমদ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা জড়িত। এ ঘটনায় জড়িত তিন স্থানীয় ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে জালালাবাদ থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালের অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বস্থ এলাকা টিলারগাঁও থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও বুলবুলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. গোলাব আহমদের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৯), আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন ( ১৯) এবং তছির আলীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান ( ১৯)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কামরুল ইসলাম গত ২৬ জুলাই ভোরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত সন্দেহজনক তিন ব্যক্তির একজন হিসেবে পুলিশি হেফাজতে ছিলেন। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।
বুধবার ( ২৭ জুলাই) দুপুর ২টায় এক প্রেসব্রিফিংয়ে আজবাহার আলী শেখ এসব তথ্য জানান। বলেন, ২৬ তারিখ ভোরের দিকে আমরা সন্দেহজনক তিনজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করি বিভিন্ন স্থান থেকে। গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গতকাল রাত ১২ ঘটিকার দিকে এই তিনজনের ভেতরে আবুল হোসেন নামে একজন তার দোষ স্বীকার করে এবং সে আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় যে সেসহ আরো দুইজন এই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা তদন্তে নেমে কামরুল ইসলাম নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি এর পর হাসান নামে আরো একজনকে আমরা গ্রেফতার করে তিনজন আসামিকে আমরা ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা অকপটে স্বীকার করে। এ ঘটনায় যে ছুরি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি এবং ভিক্টিমের মোবাইল যেটি তারা ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল সেটি কোথায় আছে সেটি আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। স্বীকারোক্তির পর আসামি কামরুল ইসলামকে নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীর লাগোয়া টিলারগাঁও যাই এবং কামরুল ইসলামের বাড়ি থেকে ছিনতাইকৃত মোবাইল ও ছুরি উদ্ধার করি। এই ছুরিতে এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীর রক্ত এখনো লেগে আছে। আমরা এতে মর্মাহত।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ভিক্টিমের পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না এবং তারা অবশ্যই শতভাগ ন্যায় বিচার পাবেন।
ঘটনার পেছনে ছিনতাই একমাত্র কারণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে আমরা যতদূর জেনেছি এটি একটি পরিপূর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা। তারা (ছিনতাইকারী) পূর্বে বিকেল ৪টা থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল, সাড়ে ৪টার দিকে ২জন সেখান থেকে চলে যায় কথা বলতে বলতে বাকি ২জন টিলায় অবস্থান করছিল এবং সন্ধ্যার পরে কামরুল আসে। তারা ভিক্টিম বুলবুল ও মার্জিয়াকে একাকী পেয়ে তাদের কাছে মোবাইল ও টাকাপয়সা দাবি করে। ছিনতাই করার সময় বুলবুলের সাথে ধাক্কাধাক্কি ধস্তাধস্তি হয়। বুলবুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এর চিহ্ন রয়েছে।
ছিনতাইকারীরা মার্জিয়ার ফোন নেয়নি কেন এ বিষয়ে তদন্তের সাপেক্ষে তিনি বলেন, আমরা মার্জিয়াকে এটা জিজ্ঞাসা করেছি। মার্জিয়া কিছুটা দূরে ছিল, মার্জিয়ার কাছ থেকে ফোন নেয় নাই, ভিক্টিমের মানিব্যাগও নেয় নাই। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করেছে, তাদের বয়স কম তাই রক্ত দেখে তারা তাৎক্ষনিকভাবে ছিটকে তিনজন তিনদিকে চলে গেছে।
এছাড়া গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে বান্ধবী ও পুলিশি নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসেন বুলবুলের ‘প্রেমিকা’ মার্জিয়া আক্তার ঊর্মি এবং পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ফোনের কললিস্ট মুছে ফেলা অবস্থায় পান। এসব ঘটনার পর বুলবুল হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা নির্দেশ করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আজবাহার আলী শেখ বলেন, মার্জিয়ার কললিস্ট এবং তার মোবাইল আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে যে এতদূর পর্যন্ত যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি তাদের কারো কোনো সম্পৃক্ততা মার্জিয়ার কললিস্টে পাওয়া যায় নাই। মার্জিয়ার মোবাইলে অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ড বা কোনো ক্রিমিনাল ক্রন্সপিরেসির মতো কোনো তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় নাই।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ