একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় ও র্যাংক নির্ভর করে উন্নতমানের গবেষণার ওপর। আর গবেষণা নির্ভর করে পর্যাপ্ত ফান্ডের ওপর। তবে প্রতিবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গবেষণা খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয় তা খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তারা বলেছেন, প্রতিবছর খুব কম হারে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ছে। এভাবে চললে শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বাজেট পাশ করা হবে তাতে গবেষণা খাতে কমপক্ষে ৫ শতাংশ অথবা গতবছরের দ্বিগুণ বরাদ্দ দেয়া উচিত হবে বলে মনে করছেন তারা।
সোমবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় ফাইন্যান্স কমিটির এবং সিন্ডিকেট সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেটটি গ্রহণযোগ্য হলে তা প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে যে বাজেট দেয়া হয় তা খুবই অপ্রতুল। মোট বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ না করা পর্যন্ত শিক্ষা এবং গবেষণার মান উন্নয়ন করা কঠিন। যেহেতু একবারে ৫ শতাংশ করাও সম্ভব না সেহেতু এবছর অন্তত গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ বাজেট হওয়া উচিত। তাহলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির যে প্রচেষ্টা সরকার গ্রহণ করছেন তা এই বাজেটে একেবারে সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অনিল চন্দ্র দেব বলেছেন, গবেষণার জন্য যে বাজেটটি দেয়া হয় তাতে গবেষণাটা ‘ফুলফিল’ আসে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন গবেষণার জন্য বাজেট দেওয়া হয় তখন বিভিন্ন সূত্রে ফান্ডটা ভাগ করে দেই। সেটা না করে যদি কয়েকজন গবেষককে ফান্ডটা ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে গবেষণার পরিমাণটা কম হলেও মানটা ভালো আসে।
গবেষণার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বা তার বেশিই বরাদ্দ দেয়া উচিত বলে মনে করছেন এই গবেষক। বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়, র্যাংক সবকিছুই নির্ভর করে গবেষণার ওপর। আমরা কেমন পড়াচ্ছি এটার ওপর নির্ভর করছে না। আমাদের কতগুলো প্রডাক্ট ন্যাশনালি অথবা ইন্টারন্যাশনালি অ্যাডাপ্ট করছে এটা একটা ফ্যাক্টর। কাজেই গবেষণার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় যতো বেশি খরচ করতে পারবে তত ভালো আউটপুট পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ৫ শতাংশ একটি গ্রহণযোগ্য বাজেট হতে পরে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। যেগুলো খুব ধীরে সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একটি গবেষণা সহায়ক সেল তৈরি করা হয় তাহলে খুব ভালো হবে। তাহলে যে গবেষণাগুলো চলছে সেগুলোর পেমেন্ট পেতে এবং টেন্ডারের বিষয়গুলো সহজ হতো। যেখানে বহুধরণের জটিলতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে সেগুলো সফল হয় না। ফলে পুরো প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, প্রতিবছর গবেষণা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা খুবই সামান্ন। যে বাজেট দিয়ে ভালোমানের গবেষণা করা সম্ভব হয় না। তাই গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। পাশাপাশি যে শিক্ষকগুলো নিয়মিত গবেষণা করছে একটি কমিটি করে তাদেরকে বাছাই করে বাজেট দিতে হবে। তাহলে ভালো মানের গবেষণা ফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া দেশের উন্নয়নে যেসকল গবেষণা করা হয় তার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট এবং লজিস্টিক সাপোর্টগুলো দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাজেট দেওয়া হয় তার সিংহভাগই যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কার্মচারিদের বেতনের ওপর। আবার গবেষণা বাজেটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রতিবছরই বাড়ছে। তবে সেটা খুবই সামান্য। যেটা দিয়ে গবেষণা চালানো সম্ভব না। তাই গবেষণার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ