বাংলাদেশে চাষকৃত মাছের মধ্যে পাঙাশ মাছ অন্যতম। পাঙাশ মাছ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় পাঙাশ মাছের সরবরাহ বেশি। ফলে পাঙাশ মাছের দাম কমে যাওয়ায় মাছ চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু গন্ধের কারণে পাঙাশ মাছ অনেকের কাছেই অপছন্দেরও বিষয়। এছাড়াও সঠিক সময়ে সরবরাহ ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয় হাজার হাজার টন পাঙাশ মাছ। যার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হন মাছ চাষীরা।
সবার কাছে মাছের পুষ্টি এবং মাছ চাষীদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পাঙাশ মাছের অব্যবহৃত অংশ থেকে মূল্য সংযোজিত ১১টি পণ্য উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক। গবেষণা দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এবং আরেক অধ্যাপক ড. মো: ইসমাইল হোসেন। গবেষণার সাথে একই বিভাগের ১৪ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ২ বছরের গবেষণাটি শেষ হয় ২০২২ সালে।
শুক্রবার (১ জুলাই) সকাল ১১টায় উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে সাংবাদকিদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ড. ফাতেমা হক শিখা।
গবেষক ড. শিখা বলেন, পাঙাশ থেকে উদ্ভাবিত ১১টি পণ্য হলো ফিশ বার্গার, ফিশ আচার, ফিশ চাটনি, ফিশ কাটলেট, ফিশ সসেজ, ফিশ পাপড়, ফিশ ফ্লেক, ফিশ চিপস, ফিশ ম্যাকারনী-পাস্তা, ফিশ জিলাটিন, ফিশ গ্লু/আঠা এসব মূল্য সংযোজিত পণ্য তৈরি করা হয়। পরে এসব মূল্য সংযোজিত পণ্যের প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এসব পণ্য সংরক্ষণ অবস্থায় খাবার উপযুক্ততার বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষক ড. ইসমাইল বলেন, পণ্যগুলোর মধ্যে ফিশ বার্গারে ২০ দশমিক ৯৮, ফিশ আচারে ২২ দশমিক ৫০, ফিশ চাটনিতে ৬ দশমিক ৬৮, ফিশ কাটলেটে ১৮ দশমিক ৩৮, ফিশ সসেজে ১২ দশমিক ৫৪, ফিশ পাপড়ে ২৩ দশমিক ৯২, ফিশ ফ্লেকে ২৪ দশমিক ৫৬, ফিশ চিপসে ২৪ দশমিক ৮৭ এবং ফিশ ম্যাকরনী-পাস্তায় ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে।
ড. শিখা আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মাছ খেতে পছন্দ করে না। তাই মাছের বিভিন্ন খাদ্য পণ্য তৈরির মাধ্যমে মাছের পুষ্টি তাদের কাছে পৌঁছানো আমাদের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে উদ্ভাবিত পণ্যগুলো শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। তারা সহজেই এসব পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে মাছের পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
উদ্ভাবিত পণ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে গবেষক ড. শিখা জানান, পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় ফিশ পণ্যগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বায়ু শূন্য পলিথিনের ব্যাগে ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। অন্যদিকে ভেজা খাবারগুলো ফ্রিজে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া ফিশ আচার এবং চাটনি প্রায় ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
নয়া শতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ