ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন খুবির ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর’

প্রকাশনার সময়: ০৬ জুন ২০২২, ১৬:২৫

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খুলনায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের নিরীহ শত শত মানুষকে হত্যা করে গল্লামারী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তাদের লাশ ফেলতো। সেই সময় গল্লামারী এবং তৎকালীন খুলনা রেডিও স্টেশনটির একতলা ভবন ছিলো হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। এই ভবনের পূর্ব পাশেই ছিলো সেমিপাকা একটি টিনশেড ঘর। এটাই ছিলো হানাদার ও তাদের দোসরদের টর্চার সেল।

অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে এখানে ধরে এনে গুলি করে, বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে, জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। স্মৃতিবাহী সেই টর্চারসেল টিনশেড ঘরটি এখনও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমানে স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবন (পুরাতন প্রশাসনিক ভবন) সংলগ্ন টিনশেড ঘরটি।

মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এই নিদর্শন সংরক্ষণে অতীতে কথা হলেও বাস্তবে এটির সংরক্ষণের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। সংস্কারের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। গত বছর ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে তিনি ঘোষণা করেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর’ স্থাপন করা হবে। শিগগিরই শুরু হবে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ।

এ বিষয়ে খুলনার বিশিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা গত ২৯ মে ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে মতামত প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদ প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ইউনিটের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর ইউনিটের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলমগীর কবীর।

এসময় উপাচার্য জানান ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরসহ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্যবৃন্দ এই স্থানটি পরিদর্শন করেছেন এবং তারা এ বিষয়ের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন। এই টিনশেড ঘরটি সংস্কার ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে ইউজিসি থেকে প্রাথমিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলেও তিনি অবহিত করেন।

এসময়ে উপস্থিত বীরমুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, এটি অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিন্তায় নেয়ার দরকার ছিলো। কেননা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বধ্যভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিলম্বে হলেও বর্তমান উপাচার্য এই স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য তারা বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার (৫ জুন) মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহৃত এই টিনশেড ঘরটিকে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে সংরক্ষণ, সংস্কার ও ল্যান্ডস্কেপিং উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। এসময় তিনি এই স্থানটি সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক নামফলক স্থাপনের পরামর্শ দেন, যাতে এখানে আগত দর্শনার্থীরা এ নির্দশনের গুরুত্ব সহজে বুঝতে পারেন।

বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্নটির সংরক্ষণ, সংস্কার ও ল্যান্ডস্কেপিং উন্নয়ন কাজ শুরু হলো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্দশন হিসেবে থাকবে এই ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ