রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের নতুন হল কমিটি হওয়ার পর একের পর এক বির্তকিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা। স্বার্থ হাসিলে ব্যাঘাত ঘটলেই হলের সিট থেকে নামিয়ে দিচ্ছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের। গণমাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ মিলে ঐ সিটেই পুনরায় তুলে দিচ্ছে ঐ শিক্ষার্থীকে। পরে ছাত্রলীগ নেতারা ঐ আবাসিক শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপে মধ্যাস্থতার পোস্ট দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছে।
ছাত্রলীগের নতুন হল কমিটি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি হলে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, সোমবার (১৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের এক আবাসকি শিক্ষার্থীকে বিছানাপত্রসহ বের করে দেয় হল ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিন হোসেন এর নেতাকর্মীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম জাবের হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষর্থী।
হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারলে ভুক্তভোগী জাবেরের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। এসময় সে বলেন, ‘সোমবার রাতে ছাত্রলীগের ৮-৯ জন রুমে আসে। তখন আমি ঘুমে ছিলাম। আমাকে ঘুম থেকে তুলে আমার বিছানাপত্র বইসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফেলে দেয়। পরে তারা আমাকে বলে, এটা রাজনৈতিক সিট এখানে তুমি থাকতে পারবা না। পরে আমি আমার আবাসিকতার কার্ড দেখালে তারা বলে এসব কার্ড দেখিয়ে কোনো লাভ নাই। প্রভোস্ট তোমাকে উঠাইছে তুমি তার কাছে যাও। আমাদের কাছে বলে কোনো লাভ নাই।’
গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেতেই না পেতেই মঙ্গলবার (১৭ মে) রাতে ঐ শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন, ‘গতকাল আমার সিট নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সেটা মাননীয় প্রভোস্ট এবং ছাত্রলীগের হল সভাপতি মোমিনুল ইসলাম ভাইয়ের মধ্যস্ততায় সুষ্ঠু সমাধান হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি আমার সিটে আছি। আমার আর কোন সমস্যা নেই। ধন্যবাদ মাননীয় হল প্রভোস্ট ও মোমিন ভাইকে।’
এর আগে গত মাসের ১১ তারিখ শের-ই-বাংলা হলে ঠিক এই ঘটনাই ঘটে। আকিব জাভেদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ঐ শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টার দিকে হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে সকাল ৯টার মধ্যে রুম ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এরপর সকালে মোস্তাফিজুরসহ আরো সাত-আট জন মিলে আমার বইপত্রসহ সব জিনিস বাইরে ফেলে দেন।’
কিন্তু তার পরের দিনই আকিব জাভেদ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে পোস্ট করেন, ‘আমার সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছাত্র উপদেষ্টা স্যার, প্রভোস্ট স্যারেরা মিলে আমার সমস্যার সমাধান করেছেন। আমাকে আপাতত অন্য একটা রুমে একটা সিট বরাদ্দ দিয়েছেন। সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা হলের বড় ভাই রাতুল ভাই সমাধান করেছেন।’
এদিকে ছাত্রলীগের একধিক নেতাকর্মী বলছেন, শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে ফেসবুকে পোস্ট করানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে থেকে নামিয়ে দেওয়া এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিনিয়তই এরকম ঘটনা ঘটছে। তার খুব সামান্যই সামনে আসছে। কর্মীরা গিয়ে শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেয় আবার নেতা গিয়ে ঐ শিক্ষার্থীকে হলে উঠিয়ে দিয়ে বাহবা নিচ্ছে। তবে ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে আমার মনে হয় ঐ শিক্ষার্থীকে জোর করে এমন পোস্ট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বিকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, হবিবুর হলের ঐ আবাসিক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়া হয়নি। আমাদের সকল নেতাকর্মীকে বলা আছে কোনো হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা যেন কোনো সমস্যার সম্মুখিন না হয়। বরং যারা আবাসিক হলে সিট পায়নি প্রাধ্যক্ষের সাথে কথা বলে তাদের হলে তোলার ব্যবস্থা যেন তারা করে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ