গ্রীষ্মের কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা, জারুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয় কোমলতা আর দৃষ্টিনন্দন বর্ণোচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতি নিজেকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে। বিদ্রোহী কবির নামে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) জারুলের এই বেগুনি আভার রূপবৈচিত্র নিয়ে লিখেছেন স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন।
সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ রাঙা ভ’রে মধুকূপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল, হিজল/ সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।’ চরণগুলো তিরিশোত্তর বাংলা কাব্যের শক্তিমান কবি, বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডবদের অন্যতম প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার। তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন একান্ত মনে। তাঁর কবিতায় বাদ যায়নি গ্রীষ্মের খরতাপের একটু প্রশান্তি,বাদ যায় নি বেগুনি আভার জারুল ফুলও।
ঋতুরাজ বসন্তে অন্য যেকোনো ঋতুর তুলনায় ফুলের সমাহার থাকে অধিক। এই ঋতুতে প্রকৃতি যেন ফুলের ডালি সাজিয়ে বসে। কিন্তু গ্রীষ্মেও প্রচণ্ড খরতাপের মাঝে একটু শান্তির পরশ বোলানো বেগুনি রঙের বিচ্ছুরণ ছড়ানো নয়নাভিরাম জারুল। রং আর রুপের বাহার ছড়ানো অপরূপ বর্ণিল সাজের এই ফুল তাপদাহে ক্লান্ত পথিকের গতি শ্লথ করে দেয়। ক্ষণিকের জন্য নিয়ে যায় প্রকৃতির সন্নিকটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্য ও শেখ রাসেল কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন অন্তত ১০০টি গাছে ফুটেছে গ্রীষ্মের শ্রেষ্ঠ উপহার জারুল ফুল। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে জারুলের ছোট-বড় অসংখ্য গাছ। চলতে ফিরতে প্রেমিক জুটি হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় জারুলের তলায়। যেন তাদেরই অভ্যর্থনা জানাতে প্রকৃতি বিছিয়ে দিয়েছে বেগুনি গালিচা। তবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার এই ফুলটির নাম জানেন না আজকের প্রজন্মের অনেকে।
জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায়। তবে বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া এবং চীনেও দেখা মেলে জারুলের। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে গাছটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তবে শুষ্ক অঞ্চলেও এদের দেখা যায়। শীতে এই নয়নাভিরাম গাছটি পাতাশূন্য হয়ে পড়ে। তবে বসন্তের শুরুতেই গাঢ় সবুজ পত্রপল্লবে ফিরে পায় তার নিজস্বতা। এর লম্বাটে পাতাগুলো পত্রদণ্ডের বিপরীতে সাজানো থাকে।
গ্রীষ্মের শুরুতেই ফোটে থোকায় থোকায় বেগুনি রঙের ফুল। গ্রীষ্মে ফুটলেও শরত পর্যন্ত দেখা যায় ফুলটি। ফুলগুলো থাকে গাছের ডগায় উপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের ছয়টি পাপড়ির মাঝে থাকে হলুদ রঙের পরাগকোষ। মাঝারি আকৃতির এই গাছটি ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুলটির ইংরেজি নাম Giant crape-myrtle। ফুলটি Lythraceae পরিবারভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia Speciosa।
মাঝে মাঝে আনমনে ফুলটির দিকে চেয়ে থাকি।আগে জারই বলে জানলেও ক্যাম্পাসে আসার পর এই গাছটির নাম জারুল বলে চিনেছি। এখন তার নতুন পাতা ছেড়ে ফুল দিয়ে সাজার সময়।নতুন বউ সাজলে যেমন লাগে,ঠিক তেমনভাবেই জারুল নিজের সাজে সজ্জিত হয়।একাকিত্বে ভাবতে থাকি যদি একজন তুমি হয়ে আসত তাকে বেদনার রং-এর (নীল) শাড়ী পড়ে আসতে বলতাম।জারুলের নিচে বসিয়ে রেখে নিজ হাতে খোঁপা বেঁধে জারুলের একগুচ্ছ ফুল গুঁজে দিতাম।তার কি তখন বেদনা ঘুচত না!!নিশ্চয় কৃষকের মধ্যদুপুরের পানির তৃষ্ণা মেটানোর মত বেদনাগুলো নিমিষেই ঝড়ে পড়ত।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ