ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের আমেজ

প্রকাশনার সময়: ১০ এপ্রিল ২০২২, ২১:৪৭

"দিদিম দিদিম দিদিম বোল, বাজছে বাঁশি, বাজছে ঢোল, নাচছে পুতুল, নাচছে মন ,ছোট্ট মনের সিংহাসন।” দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আসছে বৃহস্পতিবার (১৪ই এপ্রিল ২০২২) বাংলা সন ১৪২৯ এর নতুন ভোর। যে ভোরে উদিত হবে নতুন সূর্য। মুছে যাবে সব জঞ্জাল। নব উদ্যমে সাজবে পৃথিবী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষা, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদযাপিত হবে এই আয়োজন।

সব ধরনের হতাশা দূর করে পুরনো দিনের দুঃখ, গ্লানি ভুলে নব আনন্দে জেগে ওঠার প্রেরণা নিয়ে ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) চারুকলা অনুষদে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। রং-তুলির আঁচড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাঙিয়ে তুলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার এই আয়োজনকে।

বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূল্যবান অধ্যায় এবং বাঙালির প্রাণের এই উৎসব উদযাপনে প্রতি বছরই চারুকলা বিভাগে থাকে নানা আয়োজন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্ষবরণ সফল করতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্য একটাই বর্ণিল আয়োজনে দিনটি উদযাপন। ক্যাম্পাসের গাহি সাম্যের মঞ্চ ও চারুকলা বিভাগে ঘুরে দেখা যায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

বৈশাখের মূল আকর্ষণ বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যকে পুনরায় পরিবেশন করতে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করছে লোকজ ঐতিহ্যবাহী মুখোশ, প্যাঁচার মাস্ক, মুখোশ, হাতি, বাঘ, পোস্টার ম্যাশ, রিক্সা টানা প্রভৃতি । এছাড়াও অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহারের জন্য মুখোশ, ব্যানার-ফেস্টুনও তৈরি করা হচ্ছে।

চারুকলা অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবনী সরকার শুভদ্রা বলেন, "পুরােনাে বছরের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে, জীর্ণ ক্লান্ত অবসাদের অবসান ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বাংলা নববর্ষ। এই নতুন বছরকে সকল বাঙালি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেয়। করোনা মহামারীর ২ বছর পর আবারো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় আমরা চারুকলার শিক্ষার্থীরা নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। এটা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম নববর্ষ উদযাপন। এবার সিনিয়র ভাই-বোন এবং জুনিয়র ভাই-বোনদের নিয়ে মঙ্গলশোভা যাত্রার সকল আয়োজনে কাজ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। সামনের বছরগুলোতেও এভাবেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চাই।”

এবারের বৈশাখী আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে আয়োজিত এবারের পহেলা বৈশাখে লোকজ ঐতিহ্যবাহী মুখোশ, লক্ষীর প্রতীক প্যাঁচার মাস্ক-মুখোশ, হাতি, বাঘ, পোস্টার ম্যাশ, রিকশা টানাসহ বিভিন্ন ধরনের মুখোশ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে রং এর কাজ। এত সুন্দর কাজ করার পেছনে সম্পূর্ণ অবদান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের। ওদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এত কিছু সুন্দর ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।'

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড.সৌমিত্র শেখর দে বলেন, "বঙ্গাব্দের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাসের সাথে যুক্ত। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে চলছে।তারই কার্যক্রম হিসেবে আমরা খুব করে চেয়েছিলাম নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে। আমাদের এই আয়োজনের মূলমন্ত্র -অগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা। চারিদিকে যেমন অসূচিপনা চলছে, মতবাদের দিক থেকে, পক্ষপাতিথ্যের দিক থেকে, এমনকি আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের দিক থেকে সেই অসুচিপনাকে যদি আমরা অতিক্রম করতে না পারি, প্রত্যাখ্যান করতে না পারি তাহলে আমাদের সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতার যে বাংলাদেশ সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না। এবার যেহেতু রমযান কাল তাই রমযানের সম্পূর্ণ পবিত্রতা রক্ষা করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করব।"

নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ