সরকার বিরোধী শ্লোগান ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে গ্রেফতারের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীকে কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চেয়েছে তাদের পরিবার। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে তারা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

এসময় তারা জানান, তাদের সন্তানদের সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা সেটা না করে তারা পুলিশের অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে আসেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলামের বড় ভাই ওহেদুল ইসলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনে তার ছোট ভাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চান তিনি।

তিনি বলেন, আমার ভাই, আমার সাথেই মিরপুরের বাসায় থাকতো। আসা যাওয়া দূর হয়ে যায় বলে দুই মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘টু-লেট’ দেখে একটি মেসে তুলে দেই। ২৪ মার্চ ভোররাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আটক করে পুলিশ। পরে জানতে পারি তার নামে মামলা হয়েছে। এদিকে নতুন করে ২০২১ সালের যাত্রাবাড়ী থানার আরেকটি বিষ্ফোরক আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমার ভাই ২০২১ সালে করোনার পুরো সময়টা গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে ছিলো। সামনে যে তাকে নতুন কোনো মামলায় ফাঁসানো হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

তিনি আরো বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। আমার ভাইটা নির্দোষ। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার ভাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এমন ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত। আমার ভাইয়ের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সবার সহযোগিতা চাই।

একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রওশনুল ফেরদৌস রিফাতও একই মামলার আসামি। তার পিতা নীলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদুল করিম কল্লোল দাবি করেছেন, তার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগ থেকেই তার ছেলে ছাত্রলীগ করতেন এবং কখনো শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করছিলেন এলাকায়। অথচ সেই সময়ের এক মামলায়ও তাকে ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে জানি না। জামিনের পর ছেলের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের পরিবার আমাদের কাছে আসছে। আমরা আশ্বস্ত করেছি, জামিন নিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। পরবর্তীতে তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়টাও আমরা দেখবো। তাদের নিরাপদ শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আদালত শিক্ষার্থীদের জামিন দেয় বা তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এ নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।

নয়া শতাব্দী/জেআই