ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘটনাস্থলে না থেকেও জবি শিক্ষার্থীদের নামে গায়েবি মামলা

প্রকাশনার সময়: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:১৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে গত ৩ মার্চ নীলফামারীর গ্রামের বাসা থেকে ঢাকায় আসেন রওশনুল ফেরদৌস রিফাত। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোন আবাসিক হল না থাকায় টু লেট দেখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ভাড়া মেসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। তবে ২০ দিন অতিবাহিত না হতেই গত ২৪ মার্চ ভোররাতে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও সরকার বিরোধী শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম সেই মেসে অভিযান চালিয়ে শিবির সন্দেহে তাকেসহ মোট ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের তিন দিনের রিমাণ্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। রিফাতের মতো আরও তিনজন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ঢাকায় এসেছেন ২০ দিনের মতো।

এরপর তাদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায় আসামি দেখানো হয়। তবে এসকল শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ ২০২১ সালে তাদের সন্তানরা ঢাকায় ছিলেন না। তারা ঢাকায় এসেছে মাত্র ২০ দিন। তাহলে কেন এক বছর আগের মামলার সাথে যুক্ত হলো প্রশ্ন স্বজনদের।

২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাজু মুন্সী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে ইউনুছ রায়হান, জাহিদ বিন মকবুল, নিজাম উদ্দিন মাহমুদ, পারভেজ, এনায়েত, বাপ্পী, এখলাস ও পাথিনকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও অনেককে। এই অজ্ঞাত আসামি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের পরিবাররা।

এ মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ০৮:১৫ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সামনে মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার সামনে পাকা রাস্তার উপর উল্লেখিত সাত আসামি ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা সবাই জামাতে ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের অঙ্গসংগঠনের এর নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে, দা-লাঠিসোটা বাঁশ, ইটপাটকেল, ককটেল বোমায় একটি গাড়ির গ্লাস ভাংচুর ও ককটেল বোমা ফাটাইয়া রাজনৈতিকভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি, জনসাধারনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ ১নং আসামি ও ২ নং আসামিকে গ্রেফতার করে। আর বাকিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৪২৭ এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরণ আইনের ৩ ধারার মামলা দায়ের করা হয়।

সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া রিফাতের বাবা মোরশেদুল করিম কল্লোল নীলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের সভাপতি। তিনি দাবি করেছেন, আমার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগ থেকেই ছেলে ছাত্রলীগ করত। কখনো শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এসময় তিনি ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত বিবৃতি দেখান। এতে রিফাত ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দেখা যায়।

রিফাতে বাবা মোরশেদুল করিম আরও বলেন, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ওই সময় আমার ছেলে ঢাকায়ই ছিল না। নীলফামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রথমে ছেলে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পরে জবিতে ভালো সাবজেক্ট পেলে এখানে চলে আসে। জবিতে ভর্তির পর চলতি বছরের ৩ মার্চ ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে যুক্ত হতে ঢাকায় আসে। অথচ ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকার এক ঘটনার এমন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে যেসময় সে ঢাকায়ই আসেনি।

শুধু রিফাতের পরিবার নয়, একই দাবি জানিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া আব্দুর রহমান অলির পরিবার। অলির বাবা মো: জাহাঙ্গীর ইসলাম নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

গ্রেফতারকৃত এই শিক্ষার্থীর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি, আমার ভাই এবং আমার পিতাসহ আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। অথচ আমার ভাইকে এইরকম সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমাদের পুরো পরিবার এ নিয়ে চিন্তায় আছে। আমি আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।

এদিকে পুলিশের অভিযোগ আমলে নিয়ে সরকার বিরোধী শ্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে অভিযোগ করে ১১ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্র বিরোধী কার্যালাপের অভিযোগে এই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়। যদি আদালত তাদের জামিন দেয়, বা তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এ নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ