ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আলো ছড়াচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইয়াসিন

প্রকাশনার সময়: ১৭ মার্চ ২০২২, ১৭:৫৭

জন্মগতভাবেই চোখে সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠে ইয়াসিন। পড়ালেখা শুরুর পূর্ব থেকেই পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে রঙ্গিন পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হয় এই অদম্য তরুণ। কিন্তু নিজের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ইয়াসিন বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র।

ইয়াসিনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায়। ছোটবেলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় রোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাবা মারা যায়। চোখে আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আটকে রাখতে পারেনি ইয়াসিনকে। বড় বোনের হাত ধরে নিজের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাচ্ছে সে। চার ভাই বোনের মধ্যে ইয়াসিন তৃতীয়।

ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই আলো ছড়িয়ে গেছে এই অদম্য মেধাবী তরুণ। ২০১০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় কবিতা আবৃত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপক পায় সে। সেই থেকে কবিতা লেখা এবং আবৃত্তির প্রতি আরো বেশি আগ্রহ তৈরি হয় তার। ইয়াছিন জানান, তার ‘নীলপদ্ম’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে যেখানে সে বিভিন্ন ধরনের কবিতা আবৃত্তি করেন। সেখানে সে মানুষের উৎসাহ পাচ্ছে যা তাকে কবিতার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তুলছে।

পড়ালেখা করতে গিয়ে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। এসএসসি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করলেও পরবর্তীতে ব্রেইল পদ্ধতি না থাকায় অনেকটা সংগ্রাম করেই পড়ালেখা চালাতে হয়েছে তাকে। ব্রেইল হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এক বিশেষ ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি। ইয়াসিন জানান, এই ক্ষেত্রে সবাই তাকে সহযোগিতা করেছে। স্কুল-কলেজ জীবনে বন্ধুরা যেমন সহযোগিতা করেছে তেমনি শিক্ষকরাও অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগিতা আরো বেশী পাচ্ছে। পড়ালেখা, হাঁটাচলা, খাওয়া-দাওয়া এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াসহ সকল কাজেই নিজের বিভাগের সবাই তাকে সহযোগিতা করছে।

তার সহপাঠীদের মধ্য থেকে জিগার ইবনে কাদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমরা সহপাঠিরা ইয়াসিনকে নিজেদের মতো করে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছি। ওকে সহযোগিতা করে আমরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই। ওকে পেয়ে সত্যি ভাগ্যবান আমরা।’

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি আর্থিক অসচ্ছলতা পিছু ছাড়েনি ইয়াসিনের। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে অনেকটাই অসচ্ছল হয়ে পড়ে তার পরিবার। এরপর থেকে তার বড় বোন নাসরিন সুলতানা সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। নিজের ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ এখনো তাকেই বহন করতে হচ্ছে। ইয়াসিন জানান, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ধরণের সুবিধা এবং বৃত্তির কথা শুনতাম। কিন্তু আমি এখনো এরকম কোনো ফান্ডিং পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে যদি কোনো আর্থিক সহযোগিতা পেতাম তাহলে হয়তো আমার জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া আরো সহজ হতো।

তার আরেক সহপাঠী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের টিউশনি করার সামর্থ্য থাকলেও ইয়াসিন নিজের দৃষ্টিহীনতার কারণে টিউশনি করাতে পারে না। পড়ালেখার খরচ যোগাতে ইয়াসিনের এখন আার্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

চোখে আলো না থাকলেও স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি ইয়াসিনের। ইয়াসিনের শখের মধ্যে আছে কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি করা। বড় হয়ে ইয়াসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হতে চায়। পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ইয়াসিন কাজ করে যেতে চায়। নিজের স্বপ্ন পূরণে সে সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ