রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তাপসী রাবেয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে ঐ হলের ছয় ছাত্রীর বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত দেড়টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর হল থেকে বের করে দেন তারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্তরা হলেন, সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত মনিকা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা, নাট্যকলার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসমা বিনতি, চারুকলার শিক্ষার্থী স্মৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মনিশা ও প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার প্রেমা।
হল সূত্রে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তাপসী রাবেয়া হলের 'খ' ব্লকের চার তলায় নিয়মিত সভা হয়। এ সভায় প্রতিটি রুমের বর্ডারদের সমস্যা ও ফ্লোরে থাকার নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা হয়। গতকালের সভা চলাকালীন সময়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় রুমে চলে চায়। পরে সেখানে তার রুমমেট তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এক পর্যায়ে কয়েকজন তাকে মারধর করে ও রুম থেকে বের করে দেয়৷
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, 'গতকাল আমি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। তখন রাত দেড়টার দিকে আমার রুমমেট সূচনাকে লাইট অফ করতে বলায় সে রেগে গিয়ে ফ্লোরের সবাইকে নিয়ে আসেন৷ পরে কয়েকজন মিলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ঘটনাটি ফোনে রেকর্ড করছিলাম। এক পর্যায়ে সেটা বুঝতে পেরে মারধর করে আমার ফোন কেঁড়ে নেয় মনিকা নামের এক সিনিয়র শিক্ষার্থী। এরপর তারা জোর করে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ফোন আনলক করে ব্যক্তিগত তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করে। তিন ঘণ্টা পর হল সুপার ফোনটি ফেরত দেন৷ পরে ভোর চারটার দিকে আমাকে আর হলে থাকতে দিবে না বলে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলে তারা। তখন হল সুপার আমাকে আয়াদের রুমে রেখে আসেন।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর রুমমেট জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা কোন মন্তব্য করতে চাননি।
অভিযুক্ত মেফতাহুল জান্নাত মনিকা বলেন, 'ফারজানার রুমমেটের কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকজন সিনিয়র তাকে নিয়ে বসি। এক পর্যায়ে সে অসুস্থ বোধ করলে তার রুমমেট সূচনা তাকে রুমে নিয়ে যায়। এরপর রাত ১ টার দিকে সূচনা আমার কাছে এসে বলে ফারজানা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এজন্য আমরা কয়েকজন ওদের রুমে যাই। সেখানে ফারজানা আমাদের সাথেও তর্ক করে ও গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। পরে ম্যামকে জানালে তিনি এসে তাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।'
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী মহল বলেন, 'আমি বর্তমানে রাজশাহীর বাহিরে আছি। তবে হলের ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। আগামীকাল ফিরবো। তারপর দুই পক্ষকে ডেকে এ বিষয়ের সমাধান করবো।'
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, 'হল থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। হলের প্রোভোস্ট আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সমাধান করবো।'
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ