ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বপ্ন যখন সুইডেনে উচ্চ শিক্ষা

প্রকাশনার সময়: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫১

বর্তমান সময়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সঠিক তথ্য অনুযায়ী অনেক শিক্ষার্থী তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও অনেকে সঠিক তথ্য ও জানাশোনার অভাবে মাঝপথে এসে সব হারিয়ে তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তাই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। আপনি যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্য তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুইডেনে যেতে চান তাহলে কিভাবে যাবেন। আসুন বিষয়গুলো জেনে নিই বর্তমানে সুইডেনে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ ফাহিম সিকদারের কাছ থেকে। তার সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক নয়া শতাব্দীর বশেমুরবিপ্রবির প্রতিনিধি।

প্রশ্ন: বিদেশে উচ্চ শিক্ষা এটা কি আপনার স্বপ্ন ছিলো?

উত্তর: আমি রিসার্চ করতে পছন্দ করি এবং নতুন কিছু সবাইকে শেখাতে আমার ভালো লাগে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে একই সাথে এ দুটি কাজই করতে পারবো। শিক্ষক হওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন। আর এজন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার স্বপ্ন আমার ছিল।

প্রশ্ন: কিভাবে শুরু করলেন?

উত্তর: যখন ব্যাচেলর লেভেলে ছিলাম, তৃতীয় বর্ষ থেকেই রিসার্চ এর হাতেখড়ি নেয়া শুরু করলাম। নিয়মিত রিসার্চ পেপার পড়া, নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে নিজেকে জ্ঞাত রাখা খুবই জরুরী। আমাদের বিভাগের সজল হালদার স্যার (বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং আরো কিছু শিক্ষক মিলে প্রতি সপ্তাহে রিসার্চ সেমিনার আয়োজন করতেন সেখানে আমরা শিক্ষার্থীরা রিসার্চ পেপার পড়ে সেগুলো উপস্থাপন করতাম। এতে সবারই উপকার হতো। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা বিভাগে এরকম সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে তাহলে শিক্ষার্থীদের রিসার্চের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

প্রশ্ন: আপনার এই সফল যাত্রায় কি কি প্রতিবন্ধকতা হিসাবে পেয়েছেন?

উত্তর: সকল কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক, এর মধ্য দিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিদেশে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হচ্ছে পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট করতে যেয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল বিশেষ করে আমার সহধর্মিণী এবং মেয়ের পাসপোর্ট করতে যেয়ে। আগে থেকেই পাসপোর্ট করে রাখার পরামর্শ দেই আমি কারন শেষ সময়ে এসে অনেক ঝামেলা লেগে যেতে পারে আর IELTS পরীক্ষা দেয়ার জন্য তো পাসপোর্ট লাগবেই তাই আগে থেকে করে রাখাটাই ভালো। ভিসার একটা জটিলতায় পড়েছিলাম করোনার কারণে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সব কিছুই আলহামদুলিল্লাহ্‌ ঠিকঠাক মত হয়েছিল।

প্রশ্ন: যদি কেউ সুইডেনে যেতে চায় তাহলে কিভাবে প্রস্তুতি নিবে?

উত্তর: উচ্চ শিক্ষার জন্য সুইডেন খুবই আদর্শ একটি দেশ। এখানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো রিসার্চকে খুবই প্রাধান্য দেয়। এখানে মাস্টার্স থেকে শুরু করে পোস্ট-ডক পর্যন্ত করতে আসা যায়। মাস্টার্সের জন্য IELTS বাধ্যতামূলক। IELTS এ কমপক্ষে ৬.৫ পেতে হবে এবং কোন মডুইলে ৫.৫ এর নিচে হলে চলবে না। এখানে সর্বোচ্চ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আপ্লাই করার সুযোগ পাওয়া যায়। এবং এই এপ্লিকেশন করা লাগে এই (https://www.universityadmissions.se/intl/start) ওয়েবসাইট থেকে। এছাড়াও স্কলারশিপের ব্যবস্থাও রয়েছে। আরও বিস্তারিত তথ্য এই ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়াও ফেসবুকে “Bangladeshi Incoming Students in Sweden (BISS)” নামে একটি গ্রুপ আছে ওখানেও বাংলাতে সকল ডিটেইলস পাওয়া যাবে। পিএইচডি এর ক্ষেত্রে, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে “Vacancy” পেইজে পিএইচডি এর সার্কুলার দেয়া হয়। সুইডেনে (এবং আরো অনেক ইউরোপিয়ান দেশে) পিএইচডি কে চাকরি হিসেবে গণনা করা হয়। পিএইচডির সার্কুলার অনুযায়ী এপ্লাই করতে হয়, এবং মাস্টার্স ডিগ্রী থাকা বাধ্যতামূলক। আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউরোপে কিভাবে পিএইচডি এর জন্য এপ্লাই করতে হয় সেটা নিয়ে একটি পোস্ট লিখেছিলাম এখানে (https://fahim-sikder.github.io/post/phd-in-europe/ ) থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: সুইডেন দেশটা কেমন লাগে আপনার?

উত্তর: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্য তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুইডেন। এরা টেকনোলজিকে অনেক প্রাধান্য দেয়। এখানে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, তাই কথা বলার জন্য মোটামুটি ভাষা নিয়ে ঝামেলা হয় না (কিন্ত চাকরির ক্ষেত্রে সুইডিশ ভাষাকে প্রাধান্য দেয় ওরা [একাডেমিক জব বাদে])। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, যানবাহন ব্যাবস্থা খুবই ভালো। এদেশের মানুষরা সাধারণত নিজেদের ভিতরে (কনজারভেটিভ) থাকতেই পছন্দ করে কিন্ত কখনও কোন কাজে সাহায্য চাওয়া হলে সর্বাত্মক চেস্টা করে সাহায্য করার। এখানে আসার পরে সর্বপ্রথম যে জিনিষটার সাথে সবচেয়ে বেশি খাপ খাওয়াতে হয়েছিল সেটা হলো আবহাওয়া। আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছিল প্রথমে। সবদিক দিয়ে মিলিয়ে আমার এদেশটাকে বেশ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: আপনার ক্যাম্পাসের ছোট ভাই-বোনদের প্রতি কি পরামর্শ থাকবে আপনার?

উত্তর: যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আসতে চাও, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ থেকেই IELTS এর প্রিপারেশন নেয়া শুরু করবে যাতে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে IELTS পরীক্ষা দিতে পারো। বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ছো তা খুবই ভালো মতন বুঝে নাও, নলেজ ডেপথ বাড়াতে হবে। সিজিপিএ এর উপরে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ (কম সিজিপিএ হলে যে উচ্চ শিক্ষাতে আসা যাবে না বিষয়টা তেমন নয়, তবে স্কলারশিপ পেতে ঝামেলা হবে)। যারা টেকনিক্যাল সাবজেক্টে রয়েছো তাঁদের উচিৎ হবে সে সম্পর্কে জ্ঞান বেশি রাখা। বিশেষ করে যারা সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ডের তাঁদের প্রোগ্রামিং এ দক্ষ হওয়া উচিৎ। রিসার্চের উপরে মনোযোগী হওয়া উচিৎ। কিছু বন্ধু মিলে রিসার্চ আড্ডা করতে পারো সপ্তাহে একবার। সেখানে নতুন নতুন টপিক সম্পর্কে আলোচনা করা গেল। আর কো-কারিকুলার এবং এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা উচিৎ। বিভিন্ন কন্টেস্ট এ অংশগ্রহণ, বিভিন্ন কাজে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করলে অনেক সময় এগুলো স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়।

প্রশ্ন: বশেমুরবিপ্রবিকে মিস করেন কি ?

উত্তর: আমি প্রতিনিয়ত বশেমুরবিপ্রবিকে মিস করি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের শিক্ষার্থী ছিলাম। ক্লাসরুম, ল্যাব রুম ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে ল্যাবে কার্পেট পর্যন্ত আমরা বিছিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা একটু অন্যরকম। ক্লাস শেষে চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া, সারারাত টানা ল্যাবে কাজ করা, মধুমতির নদীর তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখা আমি খুব মিস করি।

প্রশ্ন: আপনার বশেমুরবিপ্রবি এ শিক্ষা-বর্ষ কত ছিলো? এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন।

উত্তর: বশেমুরবিপ্রবির ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ছিলাম। বর্তমানে সুইডেনের লিনশোপিং ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ