বিশ্ববিদ্যালয় মানেই স্বাধীন শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার আঁতুড়ঘর। কিন্তু সাংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার ১৬ বছর পার করলেও নিজস্ব কোনো সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে ওঠেনি প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো সমৃদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের প্রয়াস থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্টো গেল তিন বছরে বাজেট হ্রাস পেয়েছে ১৬০ শতাংশ।
সংগঠনগুলোর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ও সদস্য অনুপাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ কম হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন খাতে বাজেট ছিল ২৬ লাখ টাকা। সেখান থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট কমিয়ে করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া সংগঠন রয়েছে ৩টি। সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি। সংস্কৃতি চর্চার ১৩টি সংগঠন রয়েছে। সেগুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জবি সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মাইম সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফ্লিম ক্লাব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, মুক্তমঞ্চ পরিষদ। সেবামূলক ৩ সংগঠন রয়েছে- রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও রেঞ্জার ইউনিট।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মূল ধারার পাঠ্যক্রমের সাথে সহশিক্ষা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক আগ্রহ সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাংস্কৃতিক চর্চার সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর নানান খাতে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর বাজেট কমিয়ে আনছে। যা মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশে অন্তরায়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমির সভাপতি মাসফিকুল হাসান টনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা আর্থিক কোন সহযোগিতা পাইনি। আমাদের সদস্যরা নিজের টাকা দিয়ে প্রোগ্রাম করি। সর্বশেষ নাট্যোৎসব করে আমি ব্যাক্তিগতভাবে অনেক টাকা ঋণের কবলে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় পোক্ত হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠনের বাজেট যেভাবে কমানো হচ্ছে এটা খুবই আশঙ্কাজনক। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে বাজেট বাড়াতে হবে। উপাচার্যের সাথে আমি এ বিষয়ে কথা বলবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের বাজেট থেকে গত কয়েকদিনে সাংস্কৃতিক কিছু প্রোগ্রাম করেছি। বাজেট লাগলে আমরা পরামর্শ করে বাজেট বাড়িয়ে দিবো। গত ৩ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাজেট কমানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি এই বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ