রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের ভেতরে এক শিক্ষার্থীর তরুণ তাজা প্রাণ ট্রাকের চাপায় পৃষ্ট হয়ে ঝড়ে গেছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি, অন্য উদ্দেশ্য? এই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাবি ক্যাম্পাস। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্র নিহতের ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করেছেন। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রাতভর আন্দোলন করছেন। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ আবার কখনো ভিসির বাসভবনে বিক্ষোভ ও ফটকে হামলাও করেছে।
ছাত্র নিহতের বিচার দাবিতে উত্তাল এখন ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে শান্ত ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে উঠেছে। সচেতন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না। তারা অবিলম্বে এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কাশেম তার ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে লিখেছেন, ‘ট্রাক চাপায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন কারুশিল্প ও শিল্পকলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমল। ছেলেটি ছিলো মেধাবী ও প্রগতিশীল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট করতো। নাট্য সংগঠন রুডার কর্মী। পিতা-মাতার অতি আদরের। শিক্ষকদের অতি স্নেহের। এই প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রটি আজ নিহত হয়েছে। ক্যাম্পাসের ভিতরে কনস্ট্রাকশন ফার্মের পন্যবাহী ট্রাক তাকে পিষ্ট করে দেয়। আমি তার মৃতদেহের ছবি দেখেছি। বর্ণনাযোগ্য নয়। শোক প্রকাশের ভাষা নাই। তার স্বজনের জন্য শান্তনা দেওয়ার বাক্যও রুদ্ধ। এই তরুণ তাজা প্রাণ হরণের বিচার একান্তভাবে কামনা করি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম মুন লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসের ভিতরেই ট্রাক চাপায় নিহত আমাদের ভাই, চিন্তা করা যায়! কোন দেশে বাস, আর কতদিন দেশে মেধাবীদের প্রাণ ঝরবে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার অনুষদের 'হিমেল' কিছুক্ষণ আগে নিজ ক্যাম্পাসেই শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে ট্রাকচাপায় নিহত হয়। তার বাড়ি বগুড়া লতিফপুর এলাকায়। সে নিহত নয়, এটা একটা হত্যাকাণ্ড বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
এদিকে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিচার চেয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ট্রাকচাপায় মারা যান মাহমুদ হাবিব হিমেল। এ ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী বলছেন, ‘ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্র নিহতের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য কড়াকড়ি নির্দেশনা দেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্ত ক্রমেই বিষয়টি আরো ঘনিভূত হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ